আজকাল বাংলাদেশের অনেক বাড়ি, হাসপাতাল, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, কলকারখানা ইত্যাদিতে নর্মাল পাওয়ার সাপ্লাইয়ের পাশাপাশি স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সাপ্লাই যেমন জেনারেটর, আইপিএস, ইউপিএস, সোলার সেল ইত্যাদির ব্যবহার দেখা যায়। শহর, বন্দর, গ্রাম এমনকি দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় সোলার প্যানেলসহ অন্যান্য স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সাপ্লাইয়ের ব্যবহার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহারে প্রত্যাশা পূরণ করছে। পাওয়ার সাপ্লাই লাইনের বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হলেও স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সাপ্লাই থাকলে এখন আর হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করতে হয়না, আলোর অভাবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বাঁধাগ্রস্থ হয়না অথবা ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক থেমে থাকে না। স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সিস্টেম এর সাহায্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও মানুষ সময়মত তার কাজগুলো করতে পারে। এই অধ্যায়ে আইপিএস, ইউপিএস, জেনারেটর, চেন ওঠার সুইচ প্রভৃতি স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সাপ্লাইয়ের পরিচিতি, কার্যপ্রণালি, স্থাপন পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আইপিএস (IPS) এর পূর্ণ রূপ হলো 'Instant Power Supply'. কোন কারণে মূল বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে আইপিএস এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া যায়। এতে স্বয়ংক্রিয় সুইচ থাকে, যার কন্টাক্ট-এর পরিবর্তনে লোড বিদ্যুৎ সাপ্লাই পায় ।
IPS এর প্রধান দুইটি অংশ সঞ্চয়ী ব্যাটারি ও ইলেকট্রনিক কন্ট্রোলার সার্কিট। ইলেকট্রনিক কন্ট্রোলার সার্কিটটি ইনভার্টার ও কনভাটার উত্তর কাজই করে এবং একই ইউনিটের মধ্যে থাকে। এসি সাপ্লাইকে ভিসিতে রূপান্তর এবং ব্যাটারি চার্জ করে বিদ্যুৎ সঞ্চিত রাখে। গ্রীড এর বিদ্যুৎ বন্ধ হলে ব্যাটারিতে সঞ্চিত ডিসি বিদ্যুৎকে এসিতে রূপান্তর করে স্বয়ংক্রিয় সুইচ এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে লোডে সরবরাহ করে।
গ্রীডে বিদ্যুৎ থাকা অবস্থায় আইপিএস হয়ে সরাসরি লোডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে এবং আইপিএস এর ব্যাটারি চার্জ হয়। আইপিএস এর ক্ষমতা অনেক বেশি হয়ে থাকে ইহার রেটিং ওয়াট, কিলোওয়াট বা কেভিএ- তে লেখা হয় । বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষমতা নির্ভর করে, ব্যাটারির চার্জ ধারণ ক্ষমতার উপর। আইপিএস এর জন্য বিশেষভাবে তৈরি, সাধারনত ১২ ভোট, ২৪ ভোট, ৪৮ ভোল্ট এর লিড এসিড ব্যাটারি বা জেল/ড্রাই পিড এসিড ব্যাটারির সিস্টেম থাকে। বর্তমানে আইপিএস ব্যাপকভাবে বাসাবাড়ি, অফিস, ব্যবসা, প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক লোডে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আইপিএল মেইন সরবরাহ থেকে ব্যাটারি বা ব্যাটারি থেকে মেইন সরবরাহে যেতে সুইচিং টাইম প্রায় ৫০০ মিলি সেঃ। বর্তমানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আইপিএস এর ব্যাটারি চার্জ করে পরিচালনা করা যায়। যাকে সোলার আইপিএস বলে। এই ধরনের আইপিএস তিন প্রকার:১) অফ-গ্রীড সোলার আইপিএস 2 ) অ-ব্রীড সোলার আইপিএস ৩) অন-অফ গ্রীড আইপিএস বা হাইব্রিড আইপিএস।
আইপিএস এর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এর আউটপুট। বাজারে দুই ধরনের আটপুট প্রদানকারী আইপিএস পাওয়া যায়:- মডিফাই সাইন ওয়েভ এবং পিউর সাইন ওয়েভ। মডিফাই সাইন ওয়েভ ইন্ডাকটিভ লোডের জন্য ক্ষতিকর।
আইপিএস এ ব্যবহৃত বিভিন্ন অংশসমূহ নিম্নরূপ- ১। রেকটিফায়ার (কনভার্টার) ২। ব্যাটারি ৩। ইনভার্টার ৪। বিশেষ সুইচ ও ৫। বৈদ্যুতিক লোড এগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিচে দেয়া হলো:
১। রেকটিফায়ার: আমাদের দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা মূলত এসি। বিশেষ বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে যেমন সকল ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কিছু ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস ইত্যাদি পরিচালনার জন্য এবং আইপিএস, ইউপিএস এর সঞ্চয়ী সেলে বিদ্যুৎ শক্তিকে রাসায়নিক শক্তি রূপে জমা রাখতে ডিসি সরবরাহের প্রয়োজন হয়। যেহেতু আমাদের দেশে ডিসি সরবরাহ নাই (বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতিত) সেহেতু এসি সরবরাহ থেকে ডিসি তে রূপান্তর করা প্রয়োজন, এ কাজ করতে যে ডিভাইস ব্যবহার করা হয় তা হলো রেকটিফায়ার। অর্থাৎ যে ইলেকট্রনিক ডিভাইস অল্টারনেটিং কারেন্টকে ডাইরেক্ট কারেন্টে রূপান্তরিত করে তাকে রেকটিফায়ার বলা হয়। সাধারণত রেকটিফায়ার তৈরিতে সেমিকন্ডাক্টর ডায়োড ব্যবহার করা হয়। রেকটিফায়ার দুই প্রকার। যথা- হাফ ওয়েভ ও ফুল ওয়েভ রেকটিফায়ার। ফুল ওয়েভ রেকটিফায়ার দুই প্রকার (১) সেন্টার টেপ রেকটিফায়ার (২) ব্রিজ রেকটিফায়ার। (চিত্র ১.৩ এ ব্রিজ রেকটিফায়ার দেখানো হয়েছে) আইপিএস ও ইউপিএস এ বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যাটারিতে সঞ্চয় করে রাখতে রেকটিফায়ার ব্যবহার করা হয়। রেকটিফায়ার এর আউট পুট থেকে যে ডিসি পাওয়া যায় তা বিশুদ্ধ ডিসি নয়। একে পালসেটিং ডিসি বলা হয়। এ পালসেটিং ডিসিকে ফিল্টারের সাহায্যে পিউর ডিসিতে রূপান্তরিত করা হয়।
ফিল্টার (Filter) রেকটিফায়ারের আউটপুটে যে ডিসি পাওয়া যায় তা এসি মিশ্রিত ভেজাল যুক্ত। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাঁটি ডিসি সরবরাহের প্রয়োজন হয়। ফিল্টার সার্কিটের সাহায্যে অপ্রয়োজনীয় সিগনালকে বাদ দেয়া হয়। এই অপ্রয়োজনীয় বা ভেজাল অংশ বাদ দেয়াকে ফিল্টারিং বলে। ফিল্টার সার্কিট পাঁচ প্রকার। যথা- (১) প্যারালাল বা শান্ট ক্যাপাসিটর ফিল্টার (২) সিরিজ ইন্ডাক্টর ফিল্টার(৩) এলসি ফিল্টার(৪) আরসি ফিল্টার ও (৫) পাই ফিল্টার।
স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সিস্টেম (আইপিএস ও ইউপিএস) বিদ্যুৎ শক্তি রাসায়নিক শক্তিরূপে ব্যাটারিতে সঞ্চয় করে রাখে। নর্মাল বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হলে জরুরি প্রয়োজনের সময় ব্যাটারিতে সঞ্চিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। এ কাজে সচরাচর লিড এসিড ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়। স্বাভাবিক মোডে যখন লাইন ভোল্টেজ উপস্থিত থাকে, ব্যাটারিগুলো তখন চার্জ হতে থাকে। স্বাভাবিকভাবে সামান্য ডিসচার্জ হয়। ব্যাটারি অবিরতভাবে সামান্য পরিমাণ কারেন্ট গ্রহণ করে, ফলে ব্যাটারি পূর্ণ চার্জিত অবস্থানে থাকে। পাওয়ার সরবরাহ বন্ধ হলে ব্যাটারি হতে পাওয়ার ইনভার্টারের মাধ্যমে ডিসি থেকে এসি তে রূপান্তরিত হয়ে লোডে সরবরাহ হয়। ব্যাটারিতে কতকগুলো ইলেকট্রোকেমিক্যাল সেল বা কোষ থাকে যার একটির সাথে অন্যটি সিরিজে বা প্যারালালে সংযুক্ত থাকে। ব্যাটারির সেল হল ব্যাটারির মূল উপাদান এবং এই সেল রাসয়নিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ব্যাটারি ব্যাংক হলো অনেকগুলো ব্যাটারির সমষ্টি। এই ব্যাটারিগুলো সিরিজ বা প্যারালালে সংযোগ করা যায়। ভোল্টেজ বাড়াতে চাইলে ব্যাটারিগুলোকে সিরিজে সংযোগ দিতে হয় এবং কারেন্ট বাড়াতে চাইলে ব্যাটারিগুলোকে প্যারালালে সংযোগ দিতে হয়। চিত্র ১.৫ এ ব্যাটারি ব্যাংক দেখানো হলো ।
৩। ইনভার্টার: ইনভার্টার ডিসি কারেন্টকে এসি কারেন্টে রূপান্তরিত করতে ব্যবহার করা হয়। ইনভার্টারের আউটপুটে খুব অল্প পরিমাণ হারমোনিক ডিসটরশন থাকে। আধুনিক ইউপিএস/আইপিএস এ সচরাচর PWM (Pulse Width Modulated) ইনভার্টার ব্যবহার করা হয়। এ ইনভার্টার সিঙ্গেল ফেজ বা থ্রি-ফেজ হতে পারে। ইউপিএস ও আইপিএস ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয় করে রাখে। আমরা বাসাবাড়িতে সাধারণত এসি লোড ব্যবহার করি ফলে ব্যাটারিতে সঞ্চিত এই ডিসি কারেন্টকে এসিতে কনভার্ট করতে হয়। ইনভার্টারের সাহায্যে এই ডিসি কারেন্টকে এসি কারেন্টে রূপান্তরিত (Convert) করা হয়।
৪। স্টেটিক ট্রান্সফার সুইচ
এই ধরনের সুইচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে লোডকে ইউপিএস এর সাথে যুক্ত বা বিচ্ছিন্ন করে। সাধারণ মোডে লাইন থেকে লোডে পাওয়ার সরবরাহ দেয়। যখন পাওয়ার বন্ধ হয় তখন স্টেটিক ট্রান্সফার সুইচ লোডকে ইউপিএস এ ট্রান্সফার করে। এ ব্যবস্থাপনাকে Standby Power Supply বলে।
৫। লোড (Load)
ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক কোনো ডিভাইসকে ব্যাটারির বা পাওয়ার সাপ্লাইযের সাথে যুক্ত করলে যন্ত্রটির মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। এগুলোকে লোড বলে। অর্থাৎ যা ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎশক্তি কনজিউম করে তাকে লোডবলে। লোড সাধারণত দুইধরণের: এসি লোড ও ডিসি লোড। আবার লোডের ধরনের উপর ভিত্তি করে বৈদ্যুতিক লোডকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা-
১। রেজিস্টিভ লোড (Resistive Load)
বাতির ফিলামেন্ট, স্থির রেজিস্ট্যান্স, পরিবর্তনশীল রেজিস্ট্যান্স, সোল্ডারিং আয়রন, থার্মাল ওভার লোড রিলে ইত্যাদি ।
২। ইন্ডাকটিভ লোড (Inductive Load )
চোক কয়েল, ফ্যান, মোটর, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার ইত্যাদি।
৩। ক্যাপাসিটিভ লোড (Capacity Load )
ক্যাপাসিটর বা কনডেন্সার, ক্যাপাসিটর ব্যাংক, সিনক্রোনাস মোটর ও ফেজ অ্যাডভানসার ইত্যাদি।
কোন সিস্টেমে আইপিএস সংযোগ থাকা অবস্থায় মূল বিদ্যুৎ সাপ্লাই সরাসরি লোডে কাজ করে এবং একই সাথে আইপিএস এর ব্যাটারি চার্জও হয়। এর ক্ষমতা মূলত ব্যাটারির ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। এর রেটিং ওয়াট, কিলোওয়াট বা কেভিএ তে লেখা হয়।
আইপিএস এর ইউনিটের মধ্যে ইলেকট্রনিক কন্ট্রোলার সার্কিট, ইনভার্টার ও কনভার্টার থাকে। এটি এসি কে পূর্ণ ডিসিতে রূপান্তরিত করে ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ জমা রাখে এবং বিদ্যুৎ উৎস বন্ধ হলে স্বয়ংক্রিয় সুইচের পরিবর্তনে ব্যাটারিতে জমাকৃত বা সঞ্চিত বিদ্যুৎ পুনরায় এসিতে রূপান্তর করে লোডে সাপ্লাই দেয় ।
আজকাল ব্যাপকভাবে আইপিএস ব্যবহৃত হচ্ছে। বাসা বাড়িতে ফ্যান, লাইট, টিভি ইত্যাদি চালাতে এবং অফিস কার্যক্রমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য আইপিএস ব্যবহার হয়। আইপিএস এর সুইচিং টাইম ১ সেকেন্ড ফলে ব্যবহারকারীর কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস রিসেট বা পুনরায় আরম্ভ হয়। আইপিএস কে হোম ইউপিএস বা ইপিএসও বলা হয়।
ইউপিএস (UPS) পূর্ণ নাম হলো Uninterruptable Power Supply বা Uninterruptable Power Source. ইউপিএস এমন একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র বা ব্যবস্থা যা বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয় করে রাখে এবং পাওয়ার সরবরাহ কোন কারণে বন্ধ হলে ইউপিএস নিরবচ্ছিন্নভাবে কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ করতে পারে। ইউপিএস সাধারণত সহায়ক ( Auxiliary) বা ইমার্জেন্সি পাওয়ার সিস্টেম (Emergency Power System) অথবা স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর (Standby Generator) হতে ভিন্নতর। কেননা এটি তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। এর সুইচিং টাইম খুব কম। ইউপিএল ০.১ সেঃ এর মধ্যে ব্যাক-আপ পাওয়ার দিতে পারে। ফলে কম্পিউটার রিসেট করতে হয় না। ইহা অল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সঞ্চয় করে রাখতে পারে এবং যে কোন মূহুর্তে কম্পিউটার বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে সরবরাহ করতে পারে।
ইউপিএস (UPS) সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১। অনলাইন ইউপিএস (On-line UPS ) |
২। লাইন ইন্টারএ্যাকটিভ ইউপিএস (Line-interactive UPS) ।
৩। অফলাইন বা স্ট্যান্ডবাই ইউপিএস (Offline / Standby UPS )
১। অনলাইন ইউপিএস (On-line UPS) অনলাইন ইউপিএস (On-line UPS) এ ডাবল কনভার্সন (Double Conversion) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এটি প্রথমে এসি ভোল্টেজ (AC Voltage) কে ডিসি ভোল্টেজ (DC Voltage)-এ রূপান্তর করে। তারপর, ইনভার্টিং (Inverting) করে আবার ডিসি ভোল্টেজ (DC Voltage)-কে এসি ভোল্টেজে (AC Voltage) রূপান্তর করে। সাধারণত অনলাইন ইউপিএস (On-line UPS) ৫ মিনিট থেকে ২ ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে।
২। লাইন ইন্টারএ্যাকটিভ ইউপিএস (Line-interactive UPS)
লাইন ইন্টারএ্যাকটিভ ইউপিএস ( Line-interactive UPS) লাইনের ইনভার্টার (Inverter) কে মেইনটেইন (Maintanin) বা রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং নরমাল চার্জিং মোড (Normal Charging Mode) থেকে কারেন্ট পাথ (Current Path) রিডিরেক্ট (Redirect) করে।
৩। অফলাইন বা স্ট্যান্ডবাই ইউপিএস (Offline / Standby UPS) অফলাইন বা স্ট্যান্ডবাই ইউপিএস ( Offline / Standby UPS) পদ্ধতিতে মূল সিস্টেম (Main system) লোড (Load)সরাসরি ইনপুট পাওয়ার (Input Power) এর সাথে সংযুক্ত থাকে। যখন মেইন পাওয়ার সাপ্লাই (Main Power Supply) সংযোগ দিতে ব্যর্থ হয়, তখন এটি পাওয়ার ব্যাকআপ (Power Back up) দেয়।
১। রেকটিফায়ার
২। ব্যাটারি
৩। ইনভার্টার
৪। স্টেটিক ট্রান্সফার সুইচ
৫। লোড
নোটঃ রেকটিফায়ার, ব্যাটারি, ইনভার্টার, স্টেটিক ট্রান্সফার সুইচ এবং লোড ইউপিএস, আইপিএস উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আইপিএস অংশে উপরোক্ত অংশগুলো বর্ণনা করা হয়েছে।
ইউপিএস বা Uninterruptable Power Supply এমন একটি ডিভাইস, যা বিদ্যুৎ সরবরাহ চলাকালীন সময়ে নিজে ব্যাটারি চার্জ করে এবং এসি লাইন হতে লোড চলতে দেয়। আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সঞ্চিত বিদ্যুৎ থেকে লোডকে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়ে থাকে।
কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে নিরবচ্ছিন্ন পাওয়ার সরবরাহের জন্য এবং ভোল্টেজ রেগুলেশন, ওভার ভোল্টেজ, আন্ডার ডোস্টেজ থেকে যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করার জন্য ইউপিএস ব্যবহৃত হয়।
চেঞ্জ ওয়ার সুইচ যার মাধ্যমে দুই উৎস (জেনারেটর ও পিডিবি) থেকে আগত বিদ্যুৎ থেকে কোন একটি বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা না থাকলে অন্যটি চালনা করার জন্য যে একটি মাত্র সুইচিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় তাকে চেঞ্জ ওভার সুইচ বলে।
এটি মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে-
১. ম্যানুয়ালি চেঞ্জ ওভার সুইচ
২. অটোমেটিক চেঞ্জ ওভার সুইচ
১। ম্যানুয়ালি চেঞ্জ ওভার সুইচ
এ ধরনের সুচিং ব্যবস্থার মেইন কারেন্ট চলে গেলে তখন জেনারেটরের লাইন চালনা করে, ব্যক্তি বিশেষকে চেক প্রতার সুইচের অপারেশন চেঞ্জ করতে হয়। এটা বহুল ব্যবহৃত একটি ব্যবস্থা। এটার মাধ্যমে খুব সহজেই যে কোন একটি লাইন চলে গেলে অন্য লাইনের মাধ্যমে লোডের সরবরাহ চালনা করা যায় ।
২। অটোমেটিক চেঞ্জ ওভার সুইচ
এই সুইচিং ব্যবস্থায় মেইন কারেন্ট চলে গেলে তখন জেনারেটরের লাইন চালু হয়ে স্বয়ংক্রিয় ভাবে রিলে ও টাইমার চে ওভার সুইচের অপারেশন চেঞ্জ করে। বর্তমানে এটা বহুল ব্যবহৃত একটি ব্যবস্থা। এটার মাধ্যমে খুব সহজেই যে কোন একটি লাইন চলে গেলে অন্য লাইনের মাধ্যমে লোডের সরবরাহ চালনা করা যায়।
চেঞ্জ ওভার সুইচ যার মাধ্যমে দুই উৎস, জেনারেটর, পিডিবি/আরইবি থেকে আগত বিদ্যুৎ থেকে, কোন একটি বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা না থাকলে অন্যটি চালনা করে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ লোডে সরবরাহ দেওয়া হয়। এজন্য চেঞ্জ ওভার সুইচ এর গুরত্ব অপরিসীম ।
যে যন্ত্রের সাহায্যে যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রুপান্তরিত করা হয় তাকে জেনেরেটর বলে। এ যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরের জন্য প্রয়োজন একটি চুম্বক ক্ষেত্র (Magnetic field) ও আর্মেচার। আর্মেচারের উপরিভাগে ল্যামিনেটেড সিলিকন স্টিলের প্লটে সুপার এনামেল কপার তারের কুণ্ডলি থাকে। আর্মেচারকে চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে ঘুরানো হয়। ফলে ফ্যারাডের সূত্র অনুযায়ী আর্মেচার পরিবাহিতে পরিবর্তি (এসি) ইএমএফ (EMF-Electro Motive Force) তৈরি হয়। যে যন্ত্রের সাহায্যে আর্মেচারকে ঘুরানো হয় তাকে প্রাইম মুভার বলে। জেনারেটরের কিছু কৌশলগত পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্থাৎ জেনারেটরের শ্যাটে কমুটেটর বসিয়ে এসিকে ডিসিতে রূপান্তরিত করা হয়।
জেনারেটর সাধারনত দুই প্রকার
১। এসি জেনারেটর
২। ডিসি জেনারেটর এসি জেনারেটর দুই প্রকার। সিঙ্গেল ফেজ ও থ্রি ফেজ জেনারেটর। ডিসি জেনারেটর বৈশিষ্ট্য দিক বিবেচনা করে দুই প্রকার। যথা-
১) সেলফ এক্সাইটেড জেনারেটর
২) সেপারেটলি এক্সাইটেড জেনারেটর ।
১. সেলক এক্সাইটেড (Self exclted) :
এই ধরনের জেনারেটর এ ফিল্ড কয়েল জেনারেটরে উৎপাদিত কারেন্ট দ্বারা এনারজাইজড হয়। ফিল্ড করেল সংযোগের উপর ভিত্তি করে এই জেনারেটর তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা-
১) সিরিজ জেনারেটর
২) শান্ট জেনারেটর
৩) কম্পাউন্ড জেনারেটর।
কম্পাউন্ড জেনারেটর আবার সংযোগের উপর ভিত্তি করে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) সং শান্ট জেনারেটর
২) শর্ট শান্ট জেনারেটর
২. সেপারেটলি এক্সাইটেড (Separately excited)
এই ধরনের জেনারেটর এ ফিল্ড করেল বাহিরের কোন ডিসি সোর্স থেকে এনারজাইজড হয়।
সিরিয়া জেনারেটরঃ যে জেনারেটরের ফিল্ড করেন আর্মেচারের সাথে সিরিজে সংযোগ থাকে, তাকে সিরিজ জেনারেটর বলে।
নান্ট জেনারেটর: যে জেনারেটরের ফিল্ড করেন আর্মেচারের সাথে প্যারালালে সংযোগ থাকে, তাকে শান্ট জেনারেটর বলে।
কম্পাটিক জেনারেটরঃ যে জেনারেটরে দুইটি ফিল্ড কয়েল থাকে, একটি আর্মেচারের সাথে প্যারালালে এবং অন্যটি সিরিজে সংযোগ থাকে, তাকে কম্পাউন্ড জেনারেটর বলে।
শর্ট শার্ট কম্পাউন্ড জেনারেটর : যে জেনারেটরের আর্মেচারের প্যারালালে শান্ট-ফিল্ড এবং সিরিজ কিন্তু করেল সংযোগ করা হয়, তাকে শর্ট-শার্ট কম্পাউন্ড জেনারেটর বলে।
লং শাষ্ট কম্পাউন্ড জেনারেটর : যে জেনারেটরের আর্মেচারের সাথে কিন্তু কয়েন সিরিজে এবং শাষ্ট ফিল্ড কয়েল প্যারালালে সংযোগ করা হয়, তাকে লং-শার্ট কম্পাউন্ড জেনারেটর বলে।
১. ইয়োক মেশিনের বাইরের আবরণীকে ইরোক বলা হয়। এটি কাষ্ট আয়রন বা স্টিল দারা তৈরি করা হয়। সম্পূর্ন এসেম্বলিকে ধরে রাখে এটি।
২. পোল: লেমিনেটেড সিলিকন ষ্টিলের শিট দ্বারা পোল তৈরি করা হয়। পোল গুলো ইরোকের সাথে বোল্ট দ্বারা যুক্ত করা হয়। পোল এর সাথে ফিল্ড থাকে।
৩. ফিল্ড ওন্যাডিং: ফিল্ড ওয়্যান্ডিং সুপার এনামেল কপার তার যারা তৈরি করা হয়। এগুলো প্রত্যেক পোল এর সাথে পেঁচানো অবস্থায় সিরিজে যুক্ত থাকে।
৪. আর্মেচার কোর: এটি হচ্ছে ডিসি মেশিনের রোটর। এটি দেখতে সিলিন্ডার আকৃতির, অনেকগুলো প্লট দ্বারা তৈরি যা আর্মেচার গুয়ান্ডিংস বহন করে। আর্মেচার পাতলা লেমিনেটেড গোলাকার স্টিলের শিট দিয়ে তৈরি যেন এডি কারেন্ট লস বেশি না হয়।
৫. আর্মেচার অ্যান্ডিং: এটা হচ্ছে পেঁচানো কপার তারের কয়েন যা আর্মেচার প্লটের মধ্যে থাকে। আর্মেচার কন্ডাক্টরগুলো একটা থেকে অন্যটা এবং আর্মেচার কোর থেকে ইন্সুলেটেড থাকে।
৬. কমুটেটর। এটি দেখতে গোলাকৃতি। এর কাজ হলো জেনারেটরে উৎপন্ন অল্টারনেটিং কারেন্ট (এসি) থেকে ডাইরেক্টর কারেন্ট (ডিসি) কনভার্ট করে। ৭. ব্রাশ ব্রাশ কার্বনের তৈরি। এটি মূলত কন্ট্যাক্ট যা লোডে (বহি সার্কিটে) পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।
অবস্থান A. লুপ (কয়েল) যখন A তে অবস্থান করে তখন কোন ইএমএফ তৈরি হয় না অর্থাৎ ইএমএফ = ০ এর কারণ A অবস্থানে লুপ কোন ফ্লাক্স কর্তন করে না। লুপের দুপ্রান্ত ফ্লাক্সের সাথে সমান্তরাল থাকে।
অবস্থান B লুপ (কয়েল) যখন B তে আবস্থান করে তখন লুপের দুপ্রাপ্ত ৯০০ ডিগ্রী ঘুরে। যখন উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু বরাবর আসে কখন সর্বোচ্চ ফ্লাক্স কর্তন করে থাকে এবং জোনারেটরে সর্বোচ্চ ই.এম.এফ উৎপন্ন করে। অবস্থান C এই অবস্থানে লুপের দুপ্রাপ্ত ফ্লাক্সের অর্ধেক থেকে বিপরীতে আরো ৯০ ডিগ্রী অর্থাৎ ১৮০° সামনের দিকে অগ্রসর হয় এবং ইএমএফ আবার শূন্য (০) হয়।
অবস্থান D এই অবস্থানে লুপের দুপ্রান্ত বিপরীত মেরুর দিকে অর্থাৎ যে প্রাপ্ত আগে S পোল ছিলো সেটি এখন N পোলের দিকে এবং যে প্রাপ্ত N পোল ছিলো সেটি এখন S পোলের দিতে থাকবে। ফলে নেগেটিভ দিকে জেনারেটরে সর্বোচ্চ ই.এম.এফ উৎপন্ন করে ।
অবস্থান A. লুপ (করেল) অবস্থানে আবার সেই প্রথম অবস্থায় ফিরে আসবে। এভাবে জেনারেটর এসি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।
জেনারেটরের উৎপন্ন ভোল্টেজের দিক নির্ণয় করার জন্য ফ্লেমিংয়ের ডানহাতি নিয়ম অনুসরণ করা হয়। ফ্লেমিংয়ের ডানহাতি নিয়ম : ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনী ও মধ্যমাগুলো পরস্পরের সাথে সমকোণে প্রসারিত করলে যদি তর্জনী চুম্বক বলরেখার দিক, বৃদ্ধাঙ্গুলি পরিবাহী তারের ঘূর্ণনের দিক নির্দেশ করে, তবে মধ্যমাগুলো উৎপাদিত ভোল্টেজের দিক নির্দেশ করবে।
এ সূত্র জেনারেটরের উৎপন্ন তড়িৎচালক ফল ও কারেন্টের দিক নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।
ডিসি জেনারেটরের ফিল্ডের কাজ:
ডিসি জেনারেটরের ফিল্ড ম্যাগনেটিক কয়েল দ্বারা তৈরি করা হয়ে থাকে। জেনারেটরে ভোল্টেজ উৎপন্ন করার জন্য যে ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স প্রয়োজন হয় তা ফিল্ড কয়েলে উৎপন্ন হয়। এ ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স আর্মেচারকে কাট করলে ভোল্টেজ উৎপন্ন হয় যার ফলে আর্মেচার ঘোরে। ফিল্ড করেলের কারেন্ট কম-বেশি করে উৎপন্ন ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এজন্য ভিসি জেনারেটরে ফীল্ডের প্রয়োজন হয়।
ডিসি জেনারেটরের আর্মেচারের কাজ:
ডিসি জেনারেটরের ঘুরন্ত অংশকে আর্মেচার বলে। এ আর্মেচার ম্যাগনেটিক ফিল্ডের মধ্যে ঘোরার ফলে চুম্বক বলরেখাকে কাট করে। ফলে পরিবাহী তারের মধ্যে ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়।
ডিসি জেনারেটরের উৎপাদিত ইএমএফ (EMF-Electro Motive Force ) : ভোল্ট
এখানে,
Eg = জেনারেটরের উৎপাদিত ভোল্টেজ, ভোল্টে
= প্রতি পোলের ফ্লাক্স সংখ্যা, ওয়েভারে
Z= আর্মেচার পরিবাহীর সংখ্যা
P = পোল সংখ্যা
A = আর্মেচার প্যারালাল পথের সংখ্যা এবং
N = আর্মেচারের ঘূর্ণন গতিবেগের সংখ্যা।
ল্যাপ ওয়াইন্ডিংয়ের ক্ষেত্রে A = P অর্থাৎ আর্মেচারে প্যারালাল পথের সংখ্যা ও পোল সংখ্যা সমান। কিন্তু ওয়েভ ওয়াইন্ডিংয়ের ক্ষেত্রে A = 2 ধরা হয়।
কোনো নির্দিষ্ট জেনারেটরের ক্ষেত্রে এর আর্মেচার কন্ডাক্টর সংখ্যা, পোল ও প্যারালাল পথের সংখ্যা প্রস্তুত কালেই নির্দিষ্ট করা থাকে। পরিচালনার সময় এদের কোনোরূপ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। জেনারেটরের প্রাইমমুভারের ঘূর্ণন গতিবেগ বা চুম্বক ক্ষেত্রের শক্তি পরিবর্তন করে অথবা উভয়ের পরিবর্তন করে উৎপাদিত ভোল্টেজের পরিমাণ কম-বেশি করা যায়।
জেনারেটরের উৎপাদিত ভোল্টেজ এবং টার্মিনাল ভোল্টেজ সমান নয়। উৎপাদিত ভোল্টেজ হতে এর অভ্যড় রীন কিছু ভোল্টেজ ড্রপ বাদ দিয়ে বাকি ভোল্টেজ টার্মিনালে পাওয়া যায়। একে আউটপুট ভোল্টেজ বলে।
জেনারেটরের অভ্যন্তরীন ভোল্টেজ ড্রপ, লোড কারেন্টের উপর নির্ভর করে। ফলে জেনারেটরের লোড কারেন্ট পরিবর্তনের সাথে সাথে টার্মিনাল ভোল্টেজ কম-বেশি হয়।
জেনারেটরের টার্মিনাল ভোল্টেজ প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক মানে রাখার জন্য এবং ফিল্ড সার্কিটের কারেন্ট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফিল্ড রেগুলেটর ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ফিল্ড রেগুলেটর একটি পরিবর্তনশীল রেজিস্ট্যান্স।
ডিসি জেনারেটরের লসসমূহ:
মেশিন যত শক্তি গ্রহণ করে, তত শক্তি লোডে কখনও সরবরাহ করতে পারে না। কারণ, মেশিনে নানাভাবে কিছু না কিছু শক্তির অপচয় হয়। এ অপচয়কে লস বলে। তাই, মেশিনের কর্মদক্ষতা সর্বদা একের চেয়ে কম হয়। মেশিনে যে সমস্ত অপচয় হয় তা নিয়ে দেয়া হলো -
(১) তামার অংশের অপচয়;
(২) লোহার অংশের অপচয়;
(৩) ঘর্ষণ ও হাওয়া কাটার জন্য অপচয়।
ডিসি জেনারেটরের ইফিসিয়েন্সি
জেনারেটরকে পরিচালনার জন্য যে শক্তি বাইরে থেকে দেয়া হয় তাকে ইনপুট এবং জেনারেটর থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে আউটপুট শক্তি বলে। সুতরাং ডিসি জেনারেটরের উৎপাদিত শক্তি এবং গৃহীত শক্তির অনুপাতকে ডিসি জেনারেটরের ইফিসিয়েন্সি বা কর্মদক্ষতা বলে। একে 77 চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটিকে ১০০ দ্বারা গুণ করে শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা যায়।
জেনারেটরের গতিবেগ অপরিবর্তিত থাকলেও লোড বৃদ্ধির সাথে সাথে ফুল লোড ভোল্টেজের পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ টার্মিনাল ভোল্টেজ কমে। এ পরিবর্তন সাধারণত আর্মেচার প্রতিক্রিয়া, আর্মেচার রেজিস্ট্যান্স, আর্মেচার রিয়্যাকট্যান্স ইত্যাদির কারণে হয়ে থাকে। নো-লোড ভোল্টেজ হতে ফুল লোড ভোল্টেজ পার্থক্য করলে যে ভোল্টেজ পাওয়া যায় সে ভোল্টেজের সাথে ফুল-লোড ভোল্টেজের অনুপাতকে জেনারেটরের ভোল্টেজ রেগুলেশন বলে। এটিকে V.R. দ্বারা সূচিত করা হয়। একে ১০০ দ্বারা গুণ করে শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা হয়।
:. শতকরা (%) V.R =
এখানে,
%V.R. = শতকরা ভোল্টেজ রেগুলেশন
VNL = নো-লোড ভোল্টেজ
VFL = ফুল লোড ভোল্টেজ
এসি জেনারেটর
যে যন্ত্রের সাহায্যে যান্ত্রিক শক্তিকে পরিবর্তিত মানের ভোল্টেজে রূপান্তরিত করা হয়, তাকে এসি জেনারেটর বলে। ডিসি জেনারেটর ও এসি জেনারেটরের উভয়ের মধ্যে পরিবর্তিত ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। ডিসি জেনারেটরে উৎপন্ন এসি ভোল্টেজ কম্যুটেটর ও ব্রাশের মাধ্যমে একমূখী কারেন্ট প্রবাহে রূপান্তরিত করে। আর এসি জেনারেটরে উৎপন্ন এসি ভোল্টেজ স্পি রিংয়ের মাধ্যমে পরিবর্তিত ভোল্টেজ হিসেবে বহিঃবর্তনীতে প্রেরণ করা হয়।
৬.২ এসি জেনারেটরের বিভিন্ন অংশ
এসি জেনারেটরের বিভিন্ন অংশের নাম নিম্নে দেয়া হলো-
(১) আর্মেচার
(২) রোটর:
(৩) প্রাইমমুভার; (৪) এক্সাইটার;
(৫) স্পিরিংঃ
(৬) কার্বন ব্রাশ।
আর্মেচার অল্টারনেটরের স্থির অংশকে আর্মেচার বলে। আর্মচার দেখতে অনেকটা ড্রামের মতো। অল্টারনেটরের উপরের বডি সাধারণত কাস্ট আয়রনের ফ্রেম দ্বারা তৈরি করা হয়। ফ্রেমের কাজ আর্মেচারকে আটকে রাখা।
রোটর অল্টারনেটরের ঘূর্ণীয়মান অংশকে রোটর বা ফিল্ড বলে। রোটর দেখতে অনেকটা ফ্লাই হুইলের মতো। যার ভিতর N pole ও S pole সৃষ্টি করা হয়। উক্ত পোলগুলোতে 125V হতে 250V ডিসি সাপ্লাইয়ের সাহায্যে উত্তেজিত করা হয়।
প্রাইমমুভার: প্রাইমমুভার এমন একটি ইঞ্জিন, যার সাহায্যে অল্টারনেটরের রোটরকে ঘুরানো হয়। প্রাইমমুভার হিসেবে পেট্রোল ইঞ্জিন, ডিজেল ইঞ্জিন, টারবাইন অথবা বৈদ্যুতিক মোটরও ব্যবহার করা হয়।
এক্সাইটার: ডিসি সাপ্লাইয়ের উদ্দেশ্যে অল্টারনেটরের রোটর শ্যাফটের সাথে একটি ডিসি শান্ট জেনারেটর বসানো থাকে, তাকে এক্সাইটার বলে। অল্টারনেটরের ফিল্ড কয়েলকে উত্তেজিত করার জন্য এক্সাইটার ব্যবহার করা হয়।
স্পি রিং: ম্পি রিং পিতলের তৈরি যা কতগুলো সেগমেন্টে বিভক্ত করা থাকে। অল্টারনেটরের রোটরের সাথে দুই বা ততোধিক ম্পি রিং লাগানো থাকে।
কার্বন ব্রাশ: এটি কার্বনের তৈরি। কার্বন ব্রাশ স্লিপ রিংয়ের উপর বসানো থাকে, যার সাহায্যে রোটর ওয়াইন্ডিংকে এক্সাইটেশন করার জন্য ডিসি সাপ্লাই দেয়া হয়।
এসি জেনারেটরের কার্যপদ্ধতি
ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশনের মূলতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এসি জেনারেটর কাজ করে। এসি জেনারেটরে আর্মেচার বা স্টেটর স্থির থাকে। আর ফিল্ড আর্মেচারের মধ্যে ঘোরে। প্রাইমমুভারের সাহায্যে ফিল্ড বা রোটরকে ঘুরালে চৌম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। তখন ফিল্ড কয়েলে ডিসি সাপ্লাই দিলে রোটর ফ্লাক্স আর্মেচার কন্ডাক্টরসমূহকে কাট করে । ফলে ফ্যারাডের ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন নীতি অনুসারে এসি জেনারেটরে ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। এ অল্টারনেটিং ভোল্টেজকে স্লিপ রিং ও ব্রাশের সাহায্যে বহিঃবর্তনীতে এনে লোডে সরবরাহ দেয়া হয়। এভাবে এসি জেনারেটর কাজ করে থাকে ।
এসি জেনারেটরে ভোল্টেজ উৎপন্ন করার জন্য ফিল্ড কয়েলে ডিসি সাপ্লাই দেয়াকে ফিল্ড এক্সাইটেশন বলে। রোটরের দুটি স্লিপ রিং ও কার্বন ব্রাশের মাধ্যমে এসি জেনারেটরের ফীল্ডে সাপ্লাই দেয়া হয়।
ফিল্ড এক্সাইটেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি নিম্নে দেয়া হলো-
(ক) কোনো এসি জেনারেটরের রোটর শ্যাফটের সাথে একটি সেলফ এক্সাইটেড শান্ট বা কম্পাউন্ড ডিসি জেনারেটর চালানো হয়। উক্ত জেনারেটরের উৎপাদিত ডিসি ভোল্টেজ এসি জেনারেটরের ফিল্ড এক্সাইটেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
(খ) এসি জেনারেটরের উৎপাদিত ভোল্টেজকে রেকটিফায়ারের মাধ্যমে ডিসি করে এসি জেনারেটরের ফিল্ড এক্সাইটেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
(গ) ছোট এসি জেনারেটরে ফিল্ডকে স্থির রেখে আর্মেচারকে ঘোরোনো হয় এবং সেক্ষেত্রে ঘুরন্ত আর্মেচার হতে স্লিপ রিং ও ব্রাশের সাহায্যে এসি বৈদ্যুতিক শক্তি পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে এসি ওয়াইন্ডিংয়ের উপর অন্য একটি ছোট ডিসি ওয়াইন্ডিং হয়। স্লিপ রিংয়ের অপর প্রান্তে কম্যুটেটর বসিয়ে তার সাথে ডিসি ওয়াইন্ডিং সংযোগ করা হয়। আর্মেচারের ডিসি ওয়াইন্ডিংয়ে উৎপাদিত ভোল্টেজ কম্যুটেটর ও ব্রাশের সাহায্যে সংগ্রহ করে ফিল্ড এক্সাইটেশন দেয়া হয়।
ল্পি রিং পিতলের তৈরি যা কতগুলো সেগমেন্টে বিভক্ত করা থাকে। অল্টারনেটরের রোটরের সাথে দুই বা ততোধিক স্পি রিং লাগানো থাকে। এসি জেনারেটরে উৎপন্ন অল্টারনেটিং ভোল্টেজকে পি রিংয়ের মাধ্যমে বহিঃবর্তনীতে প্রেরণ করাই স্পি রিংয়ের কাজ।
এসি জেনারেটরের বাইরে থেকে যত শক্তি গ্রহণ করে তত শক্তি লোডে কখনও সরবরাহ করতে পারে না। ফলে এসি জেনারেটরের নানাভাবে কিছু না কিছু শক্তির অপচয় হয়। এ অপচয়কে এসি জেনারেটরের লস বলে। এসি জেনারেটরে যে সমস্ত অপচয় হয় তা নিম্নে দেয়া হলো -
(১) কপার লস
(২) কোর লস;
(৩) ব্রাশ ফ্রিকশন লস ।
(৪) রোটেশন লস;
এসি জেনারেটরকে পরিচালনার জন্য যে শক্তি বাইরে থেকে দেয়া হয় তাকে গৃহীত শক্তি এবং জেনারেটর থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে উৎপাদিত শক্তি বলে। এসি জেনারেটরের উৎপাদিত শক্তি ও গৃহীত শক্তির অনুপাতকে এসি জেনারেটরের ইফিসিয়েন্সি বা কর্মদক্ষতা বলে। এটিকে n দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একে ১০০ দ্বারা গুণ করে শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা যায়।
: . কর্মদক্ষতা% =উৎপাদিত শক্তি/গৃহীত শক্তি x ১০০
পোর্টেবল জেনারেটর একটি বৈদ্যুতিক শক্তির উৎস। এটি সাধারণত গ্রিড বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যর্থ হলে ব্যাকআপ পাওয়ার সরবরাহ করতে পারে। এটি বাড়ির বা কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আফিস আদালত ইত্যাদি জায়গায় সমস্ত বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ব্যবহার হয় না। কেবলমাত্র জরুরি প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতিসমুহ যেমন লাইট, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন, এয়ার কন্ডিশনার, হাসপাতালে অস্ত্রপচার ইত্যাদি জরুরি কাজে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যে জেনারেটর ব্যবহার করা হয় তাকে পোর্টেবল জেনারেটর বলে। এটি মূলত এসি জেনারেটর। অনেক সময় বড় আকারের পোর্টেবল জেনারেটর জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বিদুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান/কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যর্থ হলে বাড়ির বা কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আফিস আদালতে সমস্ত সরজামাদিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার প্রয়োজন হয়। কেবলমাত্র জরুরি প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতিসমূহ যেমন লাইট, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য পোর্টটেকল জেনারেটরের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
বজ্রপাতের ঠিক আগের মুহুর্তের আলোর ঝলকানি (Lightning) এর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। তোমরা অনেকেই হয়ত বজ্রপাতের ফলে পুড়ে যাওয়া গাছ দেখেছ। বাস্তুবিদ্যুতের কারণে সারাবিশ্বে মানুষ, আশী, গাছপালা, বাড়ি ও পাতি গ্রস্থ হয়। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার (The National Aeronautics and Space Administration) ২০১৪ সালের কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে এপ্রিল-মে মাসে ব্রহ্মপুত্র নদ এলাকার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়। সুতরাং আমাদের দেশে বজ্রবিদ্যুতের কলকানি বা লাইটনিং এর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তোমরা কি জানো লাইটনিং এর থেকে মানুষজন ও বৈদ্যুতিক বা পাতিকে রক্ষা করতে হলে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
মেষে সৃষ্ট উচ্চ বিভবের কারণে সংগটিত ইলেকট্রিক ডিসচার্জের ফলে লাইটনিং সৃষ্টি হয়। পাওয়ার লাইনের উচ্চ বিভব পার্থক্যের দুইটি তার বা উচ্চ ভোটেজ ব্যবহার করা হয় এমন যন্ত্রের সাথে নিম্ন ভোল্টেজের কোন কিছুর শর্ট সার্কিট ঘটলেও কিছু বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়া বা এসব জায়গায় স্পর্শ ঘটলে মানুষের শরীর বিদ্যুতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব বিপদ ও সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হলো অনাকাঙ্ক্ষি উচ্চবিভব বা কারেন্টকে তার বা অন্য কোনো পরিবাহীর মাধ্যমে মাটির অভ্যন্তরে পাঠিয়ে সেরা। এ ব্যবস্থাকে আর্থিং' (Earthing) বা গ্রাউন্ডিং' (Grounding) বলে। আর্থিং এর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক স্থাপনা বা সরঞ্জামের ধাতব অংশগুলোকে মাটির সাথে ইলেকট্রিক্যালি সংযুক্ত করা হয়। আর্থ লিকেজ কারেন্টের জন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের বড়ি বা ফ্রেম ইলেকট্রিক চার্জপ্রাপ্ত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় কোন মানুষ বা প্রাণী এগুলোর সংস্পর্শে এলে ভীষণভাবে তড়িতাহত হয়। বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি আর্থ করার ফলে দুর্বল ইনসুলেশনের জন্য বা অন্য কোনো কারণে কারেন্ট লিকেজ হলে তা সরাসরি মাটিতে চলে গিয়ে সরঞ্জাম ও ব্যবহারকারীকে নিরাপদ রাখে। এই অধ্যায়ে আর্থিং সিস্টেম, লাইটনিং অ্যারেস্টার ও আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার এর গঠন, কার্যপ্রণালি, প্রয়োজনীয়তা এবং স্থাপন ( Installation) ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এই অধ্যায় শেষে আমরা-
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আর্থিং সিস্টেম স্থাপন কাজের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারব ;
২. প্রয়োজনীয় টুলস, ইকুইপমেন্ট ও অন্যান্য সরঞ্জাম নির্বাচন ও সংগ্রহ করতে পারব;
৩. আর্থিং সিস্টেম ইনস্টল করতে পারব;
৪. আর্থ টেস্টার দিয়ে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করতে পারব; ৫. আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার ইনস্টল করতে পারব;
৬. লাইটনিং অ্যারেস্টার ইনস্টল করতে পারব;
৭. টুলস, ম্যাটেরিয়াল ও অন্যান্য ইকুইপমেন্ট রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারব; এই শিখনফলগুলো অর্জনের জন্য তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক প্রয়োগের দক্ষতা অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিং বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য এই অধ্যায়ে আমরা নিম্নলিখিত ৪টি জব সম্পন্ন করব:
জব-১: আর্থিং সিস্টেম ইনস্টল
জব-২: আর্থিং সিস্টেমের আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ; জব-৩: আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার ইনস্টল;
জব-৪: লাইটনিং অ্যারেস্টার ইনস্টল।
কোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতির ধাতব অংশকে অত্যন্ত কম রোধবিশিষ্ট (Very low resistance) তার দিয়ে মাটির সাথে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করাকে আর্থিং বলে। অনাকাঙ্খিত বিদ্যুতের প্রভাব থেকে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও মানুষকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ধাতু নির্মিত বহিরাবরণ বা অন্য কোন ধাতব অংশ হতে বিদ্যুত প্রবাহকে পরিবাহী তারের সাহায্যে নিরাপদে মাটিতে প্রেরণের ব্যবস্থাই আর্থিং ।
আর্থিং বৈদ্যুতিক সিস্টেমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের জীবন ও মূল্যবান যন্ত্রপাতি রক্ষার জন্য আর্থিং একটি অপরিহার্য বিষয়। আর্থিং এর প্রয়োজনীয়তা নিচে উল্লেখ করা হলো। ১। বজ্রপাত, শর্ট সার্কিট, ইনসুলেশন নষ্ট হয়ে বা অন্য যে কোন কারণে ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট বা সিস্টেমের ভোল্টেজ বেড়ে গেলে তা মাটিতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ।
২। অতিরিক্ত লিকেজ কারেন্ট আর্থিং তারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার (ELCB) এর সাহায্যে অল্টারনেটর, ট্রান্সফরমার ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক মেশিনারিজ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়।
৩| ট্রান্সফরমারের লাইন ত্রুটি যুক্ত হলে হাই ভোল্টেজ উৎপত্তি হয়। এই হাই ভোল্টেজকে মাটিতে প্রেরণ করার জন্য আর্থিং প্রয়োজন।
৪। কখনো কখনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জামাদির কাঠামো ও বহিরাবরণ বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে। এসব বিদ্যুতায়িত যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জামের সংস্পর্শে মানুষ বা কোনো প্রাণী এলে শরীর বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু বা পঙ্গুত্বের সম্ভাবনা থাকে। আর্থিং বৈদ্যুতিক শকের প্রাবল্য কমিয়ে দেয়।
৫। বড় বড় ইমারতকে বজ্রপাত হতে রক্ষা করার জন্য আর্থিং প্রয়োজন ।
১। ত্রুটিযুক্ত সার্কিটের কারেন্টকে আর্থিং সহজে মাটির অভ্যন্তরে প্রেরণ করে। এর ফলে ফিউজ, সার্কিট ব্রেকার প্রভৃতি রক্ষণযন্ত্র খুলে যায় এবং ত্রুটিযুক্ত অংশ সহজে উৎস হতে আলাদা হয়ে পড়ে।
২। ওয়্যারিংয়ের যে কোন অংশের ভোল্টেজকে আর্থের সাপেক্ষে কোনো নির্দিষ্ট মানে বজায় রাখার জন্য সঠিকভাবে আর্থিং করা প্রয়োজন।
৩। অনেক সময় আমাদের অজান্তে বিদ্যুৎ সিস্টেমে ত্রুটি থেকে যেতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে যেন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি উচ্চ ভোল্টেজ এর প্রভাবে নষ্ট না হয়ে যায় সেজন্য সঠিকভাবে আর্থিং করা জরুরি।
আর্থিং এর প্রধান উপাদান তিনটি, যথা-
১। আর্থ প্লেট বা আর্থ ইলেকট্রোড,
২। মেইন আর্থিং লিড বা আর্থ তার
৩। আর্থের নিরবিচ্ছিন্ন (Continuity) তার।
১। আর্থ-ইলেকট্রোড (Earth-Electrode ) : মাটির তলায় পোতা ধাতব পদার্থকে আর্থ ইলেকট্রোড বলে। আমরা জানি পৃথিবীর সব অংশের মাটি অবিচ্ছিন্ন বা সংযুক্ত। ফলে যেখানেই স্থাপন করা হোকনা কেন আর্থ-ইলেকট্রোড পৃথিবীর সব মাটির সাথে ইলেকট্রিক্যালি সংযুক্ত হয়ে যায়। আর্থিং এর কাজে বেশির ভাগ সময় নিম্নলিখিত পাঁচ ধরনের অর্থ ইলেট্রোডের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়-
(ক) পাইপ ইলেকট্রোড
(খ) রঙ ইলেকট্রোড
(প) প্লেট ইলেকট্রোড
(ঘ) ফ্লিপ বা কন্ডাকটর ইলেকট্রোড
(খ) শিট ইলেকট্রোড।
(ক) পাইপ ইলেকট্রোড: এটি এক ধরনের গ্যালভানাইজ করা লোহা বা ইস্পাতের তৈরি পাইপ যার ভিতর দিকের সর্বনিম্ন ব্যাস ৩৮.১ মিমি. এবং ঢালাই লোহার তৈরি পাইপ হলে সর্ব নিম্নব্যাস ১০০ মিমি.। পাইপের দৈর্ঘ্য কখনোই ২.৫ মিটার (৯ ফুট) এর কম হলে চলবে না। পাইপ ইলেকট্রোড মাটিতে খাড়া করে এমনভাবে পুঁততে হবে যেন পাইপের উপরি ভাগ কমপক্ষে ১.২৫ মিটার মাটির তলায় থাকে। শুকনো মাটির তুলনায় ভেজামাটির রোধ কম হয়। একারণে কার্যকর আর্থিং এর জন্য অবশ্যই মাটির আর্দ্র র পর্যন্ত আর্থ ইলেকট্রোড পৌঁছাতে হবে। ইলেট্রোডের চারপাশে এক স্তরের পর আরেক স্তর কাঠ-কয়লা এবং লবণ দিয়ে ঠেলে মাটি ভরাট করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। পাইপকে ৭.৫ সেমি. অন্তর ব্যাস বরাবর এফোর ওফোর ১২ মিমি. ব্যাস বিশিষ্ট ছিদ্র করা হয়। ওপরের ফানেল দিয়ে পাইপের ভিতরে মাঝে মাঝে পানি ঢাললে ঐ ছিদ্রের মাধ্যমে ইলেকট্রোডের চারপাশের পানি ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মাটি ভেচ্ছা থাকে। ইমারত থেকে পাইপ ইলেকট্রোডের দূরত্ব ১.৫ মিটার (৫ ফুট) এর কম রাখা যাবে না।
(খ) রড ইলেকট্রোড: গ্যালভানাইজ করা লোহার বা ইস্পাত রঙ (যার সর্বনিম্ন ব্যাস ১৬ মি.মি. বা ৫/৮ ইঞ্চি) অথবা তামার রঙ (বার সর্বনিম্ন ব্যাস ১২.৫ মি.মি.) কে ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে রঙের সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্য ২ মিটার হতে হবে। কাঙ্খিত অর্থ রেজিট্যাল পাওয়ার জন্য রঙের দৈর্ঘ্য বাড়তে পারে।
(গ) প্লেট ইলেকট্রোড: গ্যালভানাইজ করা লোহার বা ইস্পাতের প্লেট, যার সাইজ ৬০ সে. মি. x ৬সে. মি.×৬.৩৫ মি.মি. এবং তামার আর্থ প্লেটের সাইজ ৬০ সে. মি. x ৬০ সে. মি. x ৩১৫ মি.মি. কে প্লেট ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চালাই লোহার প্লেটের ক্ষেত্রে পুরুত্ব ১.৪৫ মি.মি। উভয়ক্ষেত্রে প্লেটকে দাঁড় করিয়ে মাটিতে এমনভাবে পুঁততে হবে, যাতে প্লেটের উপরের অংশ ভূমির অন্তত তিন মিটার নিচে থাকে (চিত্র-২.৩)। আর্থ রেজিস্ট্যান্স সন্তোষজনক পাওয়া না গেলে একাদিক প্লেট প্যারালাল-এ সংযুক্ত করে ব্যবহার করা হয়।
(ঘ) স্ট্রিপ বা কন্ডাকটর ইলেকট্রোড: গ্যালভানাইজ করা লোহা বা ইস্পাতের পাত (যার সর্বনিম্ন প্রস্থচ্ছেদ ২৫ মি. মি. × ৪ মি. মি.) কিংবা তামার পাত (যার সর্বনিম্ন প্রস্থচ্ছেদ ২৫ মি. মি. x ১.৬ মি. মি.) কে ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গোলাকার তামার কন্ডাকটর হলে সর্বনিম্ন প্রস্থচ্ছেদ ৩ বর্গ মি. মি. এবং গ্যালভানাইজ করা লোহা বা ইস্পাতের হলে ৬ বর্গ মি. মি. হওয়া উচিত। স্ট্রিপ বা কন্ডাকটরের দৈর্ঘ্য ১৫ মিটারের কম হওয়া উচিত নয়। কাঙ্খিত আর্থ রেজিস্ট্যান্স পাওয়ার জন্য প্রয়োজনে কন্ডাক্টরের দৈর্ঘ্য বাড়াতে হয়।
(ঙ) শীট ইলেকট্রোড : গ্যালভানাইজ করা লোহার শিট, যার পুরুত্ব কমপক্ষে ১.৬৩ মি. মি. (১৬ গেজ) এবং সাইজ ২ হতে ৬ বর্গমিটার হওয়া উচিত।
আর্থ ইলেকট্রোডের সঙ্গে মেইন সুইচের বডি, আর্থবাস বার প্রভৃতির সংযোগ করার জন্য যে তার ব্যবহার করা হয় তাকে মেইন আর্থিং লিড বা আর্থ তার বলে। ইলেকট্রোড যে ধাতুর তৈরি হবে আর্থ তারও সেই ধাতুর তৈরি হতে হবে। আর্থের তারে যেন কোন আঘাত না লাগে সেজন্য আর্থিং তার মেঝেতে এবং দেয়ালে ঢুকিয়ে দিলে ভাল হয়। মাটির তলা দিয়ে নেয়ার সময় তার যেন কমপক্ষে ৬০ সেমি. (২ ফুট) মাটির নিচে থাকে। ক্ষতি এড়ানোর জন্য আর্থের তারটিকে একটি ১২ মিমি. জিআই পাইপের ভেতর দিয়ে নেয়া যেতে পারে। আর্থ তারকে নাট-বল্টু দিয়ে আটকিয়ে, প্রয়োজনে ঝালাই করে আর্থ ইলেকট্রোডের সঙ্গে সংযোগ দিতে হয়।
৩। আর্থ কন্টিনিউয়িটি (Continuity) কন্ডাকটর যে কন্ডাকটরের সাহায্যে বৈদ্যুতিক আসবাব, যন্ত্রপাতি কিংবা ওয়্যারিংয়ের ধাতুর আবরণ বা খোলের সঙ্গে আর্থ তার এর কানেকশন করা হয় তার নাম আর্থ কন্টিনিউটি কন্ডাকটর। এ তারের সাহায্যে সমস্ত ওয়্যারিং ও আসবাবপত্রে আর্থের কন্টিনিউটি বজায় থাকে।
সঠিক আর্থিং করতে সঠিক উপাদান সমূহ ব্যবহার করে নিয়ম মোতাবেক আর্থিং করতে হয়। ব্যবহৃত আর্থ ইলেকট্রোডের উপর ভিত্তি করে আর্থিং পাঁচ প্রকার হয়ে থাকে। যথা-
১। পাইপ আর্থিং
২। প্লেট আর্থিং
৩। রড আর্থিং
৪। শিট আর্থিং এবং
৫। স্ট্রিপ আর্থিং ।
নিচে আর্থিং করার বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া হলো।
১। পাইপ আর্থিং: গ্যালভানাইজ করা লোহার বা ইস্পাতের পাইপ ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাইপের দৈর্ঘ্য কমপক্ষে ২.৫ মিটার আর ভিতরের ব্যাস ৩৮.১ মি. মি. হতে হবে। মাটি যদি শুকনা এবং খুব শক্ত হয়, তবে পাইপের দৈর্ঘ্য ২.৭৫ মিটার নিতে হবে। পাইপকে লম্বালম্বিভাবে ৭.৫ সে. মি. অন্তর ১২ মি. মি. ব্যাস বিশিষ্ট ছিদ্র করা হয়। একটি ছিদ্র পরবর্তী ছিদ্রের আড়াআড়ি হবে যেন উপর হতে পানি ঢাললে ছিদ্রের মাধ্যমে পানি গিয়ে ইলেকট্রোডের চারপাশে মাটি ভেজা রাখে। বিল্ডিং হতে ১.৫ মিটার ব্যবধানে সাধারণত ৩.৭৫ মিটার গভীর গর্ত করা হয়। তবে মাটির ভিতর যতটা গভীরে ভেজা মাটি পাওয়া যায়, ততদূর পর্যন্ত গর্ত খোড়া প্রয়োজন । পাইপের নিচের দিকে চারপার্শ্বে ১৫ সে. মি. পর্যন্ত জায়গা কাঠকয়লার ও লবণ দিয়ে ঘিরে দিতে হয়। এর ফলে পাইপ আর মাটির মধ্যে সংযোগের আয়তন বাড়ে এবং লবণ সে আর্থেও রেজিস্ট্যান্স কমিয়ে দেয়। গর্তের মধ্যে প্রথম স্তরে লবণ আর দ্বিতীয় স্তরে কাঠ কয়লা আবার তৃতীয় স্তরে লবণ এবং চতুর্থ স্তরে কাঠ কয়লা এভাবে স্তর থাকে। গ্রীষ্মকালে যখন মাটির আর্দ্রতা কমে গিয়ে মাটির রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পায়, তখন যেন গর্তের মধ্যে কয়েক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে মাটিকে স্যাঁত স্যাঁতে রাখা যায়, সে জন্য ইলেকট্রোডের মাথায় সকেটের সাহায্যে একটি ২.৫ মি. মি. ব্যাসের লোহার পাইপ বসিয়ে তার উপর একটি ফানেল বসানো হয়। ফানেলের মুখ তারের জালি দিয়ে ঢেকে দিতে হয় যেন কোন শক্ত জিনিস ঢুকে পাইপের মুখটা বন্ধ করে ফেলতে না পারে (চিত্র- ২.৪)। বৈদ্যুতিক স্থাপনার কোথাও কোন দোষত্রুটি দেখা দিলে সর্বাপেক্ষা বেশি কারেন্ট আর্থে যাবে, তা হিসেব করে সে অনুসারে আর্থের তারের আয়তন নির্ণয় করা হয়। বৈদ্যুতিক স্থাপনার কোথাও কোন দোষত্রুটি দেখা দিলে সর্বাপেক্ষা বেশি যত কারেন্ট আর্থে যাবে, তা হিসেব করে সে অনুসারে আর্থের তারের আয়তন নির্ণয় করা হয়। তবে সচরাচর ৮ নং এসডব্লিউজি গেজের গ্যালভানাইজকরা লোহার তার আর্থ তার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর্থ ইলেকট্রোডের উপরে ১৯.০৫ মি. মি. ব্যাসের যে লোহার পাইপ বসান থাকে, তার সঙ্গে আর্থ তার সংযোগ করে ভূমির প্রায় ৬০ সে. মি. নিচ দিয়ে ১২.৭ মি. মি. ব্যাসযুক্ত গ্যালভানাইজ করা লোহার পাইপের মধ্য দিয়ে আর্থের তারকে আর্থিং বাসবার বা মেইন সুইচ পর্যন্ত নেয়া হয়। অতঃপর আর্থ কন্টিনিউয়িটি তারের মাধ্যমে সকল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামে সংযোগ দিতে হয়। উল্লিখিত কার্যক্রমে আর্থিং সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে।
২। গ্যালভানাইজ করা লোহার প্লেট বা তামার প্লেটের সাহায্যে আর্থিং:
গ্যালভানাইজ করা লোহার প্লেট, যার সাইজ কমপক্ষে ৬০ সে. মি. x ৬০ সে. মি. x ৬.৩৫ মি.মি. কিংবা ডামার প্লেট, যার সাইজ কমপক্ষে ৬০ সে: মি: x ৬০ সে. মি. x ৩.১৮ মি. মি. কে আর্থ ইলেকট্রাড হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। উভয় ক্ষেত্রে প্লেটকে দাড় করিয়ে মাটিতে পুঁততে হবে, যাতে তার উপরের দিকটা ভূ-পৃষ্ঠের অন্তত ৩ মিটার নিচে থাকে। এমন মাটিতে আর্থ প্লেট রাখতে হবে, যেখানে অনবরত ভিজে থাকে। প্লেটের চারিদিকে কাঠ-কয়লা কিংবা কার্বনের টুকরা ঠেসে দিয়ে লবণ মিশ্রিত পানি ঢেলে গর্ত ভরাট করতে হবে। প্লেটের উপর থেকে সাধারণত দুইটি গ্যালভানাইজ করা লোহার পাইপ উঠে আসে। একটি পাইপের ব্যাস ১২.৭ মিলিমিটার। এই পাইপের মধ্য দিয়েই আর্থেও তার ভূমির প্রায় ৬০ সে. মি. নিচ দিয়ে মেইন সুইচ বোর্ড কিংবা আর্থিং বাস বার পর্যন্ত আনা হয়। অন্য পাইপটির ব্যাস ১৯.০৫ মি. মি., যার উপর মাথায় একটি ফানেল থাকে। ফানেলের মুখ তারের জালি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় যেন কোনো শক্ত জিনিস ভিতরে ঢুকে মুখ বন্ধ করে ফেলতে না পারে। শুষ্ক মৌসুমে মাঝে মাঝে পানি ঢেলে আর্থ প্লেটের পার্শ্ব ভিজে রাখার জন্য এরূপ বন্দোবস্ত করা হয়। ফানেলসহ পাইপের উপরের মাথায় চারদিকে ৩০ সে. মি. x ৩০ সে. মি. x ৩০ সে. মি. মাপের ইটের চৌবাচ্চা গাঁথা থাকবে। চৌবাচ্চাটির একটি ঢাকনা থাকবে যেটা প্রয়োজনে খুলে পানি ঢালা যায়। চিত্র ২.৫-এ প্লেট আর্থিং দেখানো হয়েছে।
৩। রড আর্থিং বর্তমানে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি গ্যালভানাইজ করা ২.৫ মিটার লম্বা ১৬ মি. মি. ব্যাসের লোহার বা জিআই পাইপকে আর্থিং ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করছে। পাথরের জায়গায় এ রকম রড অনুভূমিকভাবে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রয়োজনে রডের দৈর্ঘ্য বাড়ানো যেতে পারে।
৪। কন্ডাকটর বা স্ট্রিপ আর্থিং
এতে গ্যালভনাইজ করা লোহা বা ইস্পাতের পাত (যার সর্বনিম্ন প্রস্থচ্ছেদ ২৫ মি. মি. x ৪ মি. মি.) অথবা তামার পাত (যার সর্বনিম্ন প্রস্থচ্ছেদ ২৫ মি. মি. x ১.৬ মি. মি.)-কে ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই ইলেকট্রোডের দৈর্ঘ্য ১৫ মিটারের কম নেয়া উচিত নয়। কমপক্ষে ৫০ সে. মি. মাটির নিচে একটি বা একাধিক নালা খনন করে তার মধ্যে ইলেকট্রোড শুইয়ে রাখা হয়।
৫। শিট ইলেকট্রোড
এতে গ্যালভানাইজ করা লোহার পাত (যার সাইজ ২ বর্গমিটার থেকে ৬ বর্গমিটার এবং পুরুত্ব কমপক্ষে ১.৬৩ মি. মি.) কে ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত পাহাড়ের ঢালে পরিখা খনন করে শিট ইলেকট্রোড বসাতে হয়। এছাড়া ভূ-গর্ভস্থ জিআই পাইপের পানির লাইনের সাহায্যেও আর্থিং করা যায়। এক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের আর্থিং ক্যাম্পের সাহায্যে পাইপের কাছে আর্থিং তার এমনভাবে এটে দেওয়া হয়, যাতে সংযোগস্থলের রেজিস্ট্যান্স খুবই সামান্য থাকে। পানির লাইন নিজস্ব সম্পত্তি না হয়ে মিউনিসিপ্যালিটি কিংবা অন্য কারো সম্পত্তি হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত আর্থিং করা যাবে না।
আর্থ ইলেকট্রোড ও আর্থ লিড এর সমন্বিত রেজিস্ট্যান্সকে আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলে। বাসা-বাড়ি, কল-কারখানায় ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি নিরাপদে ব্যবহার করার জন্য, আর্থিং টার্মিনাল থেকে ১টি আর্থের তার টেনে নিয়মানুযায়ী মাটির নিচে স্থাপিত ইলেকট্রোডের সাথে সংযোগ থাকে। আর্থিং এর রেজিস্ট্যান্স খুব কম হওয়া বাঞ্ছনীয়। সামান্য কারেন্টও যদি কোনো সরঞ্জামাদির বডিতে আসে তা যেন সাথে সাথে আর্থিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই মাটির নিচে যেতে পারে সে জন্য আর্থ রেজিস্ট্যান্স কম হওয়া দরকার। বড় বড় মিল ফ্যাক্টরিতে ১ ওহম এর কম এবং বাসাবাড়ির আর্থ রেজিস্ট্যান্স ৫ ওহম এর কম হওয়া উচিত।
আর্থিং পদ্ধতির কার্যকারীতা নির্ভর করে সর্বনিম্ন আর্থ রেজিস্ট্যান্সের মানের উপর। আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলতে সম্পূর্ণ আর্থিং পদ্ধতির রেজিস্ট্যান্সকে বোঝায়। বাড়ি ঘর, ওয়ার্কশপ, কলকারখানার মেইন আর্থ টার্মিনাল থেকে আর্থ ইলেকট্রোডের মাধ্যমে যে রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায় তাকে আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলে। অর্থাৎ আর্থ লিড এবং আর্থ ইলোকট্রোডের মোট রেজিস্ট্যান্সকেই আর্থ রেজিস্ট্যান্স বলে। আর্থিং সিস্টেম ইনস্টল করার পর অথবা পুরাতন আর্থিং সিস্টেমের আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা খুবই জরুরি। আর্থিং সিস্টেম সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা তা নিম্নলিখিত যে কোন পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়।
১। মেগার আর্থ টেস্টার পদ্ধতি ও ২। টেস্ট ল্যাম্প পদ্ধতি
১। মেগার আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাণ: মেগার আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ ইলেকট্রোডের রেজিস্ট্যাপ মাপা হয়। এতে তিনটি টার্মিনাল থাকে। আর্থ টার্মিনাল (E), পটেনশিয়াল টার্মিনাল (P) এবং কারেন্ট টার্মিনাল (C) (চিত্র-২.৬)। যে আর্থ ইলেকট্রোড এর রেজিস্ট্যান্স মাপতে হবে তার সঙ্গে E টার্মিনাল কানেকশন করতে হবে। এবার দুইটি স্পাইক নিয়ে একই লাইনে ঐ আর্থ ইলেকট্রোড হতে ২০ থেকে ২৫ মিটার
পর পর দূরে মাটিতে পুঁততে হবে। প্রথমটির অর্থাৎ আর্থ ইলেকট্রোড এর নিকটবর্তী স্পাইককে P টার্মিনালের সাথে এবং পরবর্তী দ্বিতীয়টির সাথে C টার্মিনাল সংযোগ করতে হবে। এবার মেগারের হাতলের সাহায্যে জেনারেটরকে ঘুরালে E হতে মাটির মধ্য দিয়ে C তে পরবর্তী কারেন্ট প্রবাহিত হবে। এই কারেন্টকে ধরলে এবং E হতে P পর্যন্ত ভোল্টেজকে V ধরলে E হতে P পর্যন্ত আর্থের রেজিস্ট্যান্স হবে , এই R এর মান অবশ্য আর্থ টেস্টারে সরাসরি রিডিং পাওয়া যাবে। টেস্ট পদ্ধতিটি ২.৬ নং চিত্রে দেখানো হয়েছে। এভাবে মাঝের স্পাইককে একই লাইনে ১.৫ মিটার হতে ৩ মিটার যথাক্রমে আর্থ ইলেকট্রোডের নিকট ও দূরে সরিয়ে পুঁতে আরও দুইটি রিডিং নিতে হবে। তারপর মোট তিনটি রিডিং এর গড় মানকে আর্থের রেজিস্ট্যান্স ধরা হবে। কিন্তু জনবহুল শহরে যেখানে P এবং C স্পাইক পোঁতার জায়গা নেই। সেখানে আর্থ টেস্টারের P ও C টার্মিনাল দুইটিকে শর্ট করে তার সংগে একটি লিডিং তার সংযোগ করে পানির পাইপের সংঙ্গে সংযোগ করতে হবে। এবার হাতল ঘুরিয়ে আর্থ টেস্টারের রিডিং নিতে হবে। অতঃপর E টার্মিনালের সাথে P এবং C এর লিডিং তার সংযোগ করে পুণরায় রিডিং নিতে হবে। প্রথম রিডিং হতে দ্বিতীয় রিডিং বাদ দিলে আর্থ রেজিস্ট্যান্স এর মান পাওয়া যাবে। টেস্ট করার সময় সতর্ক হতে হবে যেন আর্থ ইলেকট্রোড ও স্পাইক কাছাকাছি না থাকে।
আর্থ টেস্টারের সাহায্যে আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপের সময় যেসব সাবধানতা মানতে হবে সেগুলো হলো- ১। টার্মিনাল সংযোগ শক্তভাবে দিতে হবে যাতে ঢিলা (Lose) না থাকে।
২। সাহায্যকারী স্পাইক মাটির মধ্যে ১ মিটার পর্যন্ত পুঁততে হবে।
৩। আর্থ টেস্টারের পাঠ সাবধানতার সাথে গ্রহণ করতে হবে।
৪। রেজিস্ট্যান্সের মান সন্তোষজনক কিনা তা প্রতি বছর অন্তত একবার পরীক্ষা করা উচিত
২. আর্থ টেস্টিং বাতি দিয়ে আর্থ রেজিস্ট্যাল পরীক্ষা করা।
আর্থ টেস্টার ছাড়াও আর্থ টেস্টিং বাতি দিয়ে খুব সহজে আর্থিং এর কার্যকারিতা জানা যায়। এক্ষেত্রে টেস্ট বাতির এক প্রাপ্ত সাপ্লাইয়ের সাথে এবং অন্য প্রাপ্ত আর্থিং এর সাথে সংযোগ করলে বাতি যদি ভালোভাবে জ্বলে তবে বোঝা যাবে আর্থিং ঠিকভাবে কাজ করছে না। যদি আর্থ কানেকশন থেকে কিছু দূরে ঠাণ্ডা পানির পাইপ বা অন্য কোনো আর্থ করা জিনিস পাওয়া যায় যার রেজিস্ট্যান্স খুব কম তাহলে ভোল্টমিটার এবং অ্যামিটার দিয়ে আর্থ কানেকশনের রেজিস্ট্যান্স বের করা যাবে। প্রক্রিয়াটি ২.৭ নং চিত্রে দেখানো হয়েছে। পানির পাইপ আর আর্থ-
কানেকশনের সঙ্গে একটি অ্যামিটারের দুইপ্রান্ত সংযোগ করে অল্টারনেটিং কারেন্ট প্রবাহিত করতে হবে। এরপরপানির পাইপ ও আর্দ্র কানেকশনের মধ্যেকার বিভব পার্থক্য (ভোল্টেজ পরিমাপ করতে হবে।
এখন যদি পানির পাইপের রেজিস্ট্যান্স অতি নগন্য হয়, তবে মাটির রেজিস্ট্যান্স = ভোল্টেজ/ কারেন্ট
কোনো পদার্থই রেজিস্ট্যান্স শূন্য হয় না। একারণে একেবারে রেজিস্ট্যান্স বিহিন কানেকশন দেয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই প্রক্রিয়ায় আর্থ রেজিস্ট্যান্স মাপার সময় ডাইরেক্ট কারেন্ট (ডি.সি) ব্যবহার করা উচিত নয়।
ইলেকট্রিফিকেশনের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বাসা বাড়ির ক্ষেত্রে আর্থ রেজিস্ট্যান্স সর্বনিম্ন ১ ওহম এবং সর্বোচ্চ ৫ ওহম পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। বড় বড় মিল ফ্যাক্টরিতে আর্থ রেজিস্ট্যান্স ১ ওহম এর কম হওয়া উচিত। পাহাড়ি এলাকায় আর্থ রেজিস্ট্যান্সের মান ৮ ওহম পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য।
বৈদ্যুতিক স্থাপনা ও যন্ত্রপাতির ত্রুটি পরীক্ষার জন্য মেগার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। উচ্চমানের রেজিস্ট্যান্স মেগাওহম স্কেলে পরিমাপ করতে মেগার ব্যবহৃত হয়। যন্ত্রপাতির ত্রুটি পরীক্ষার জন্য যে বিদ্যুৎ সরবরাহ দরকার হয় তা একটি মেগারে হস্তচালিত ডিসি জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন করা যায়। আজকাল ব্যাটারি চালিত ডিজিটাল মেগার পাওয়া যায়। এগুলোর মাধ্যমে সরাসরি আর্থ রেজিটেন্সের মান পাওয়া যায়।
২.১ নং চিত্রে একটি মেগারের সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখানো হয়েছে। এতে ডিসি জেনারেটর, স্থায়ী ম্যাগনেট মুভিং কয়েল, পিএমএমসি (Permanent Magnet Moving Coil) থাকে। পিএমএমসি একটি মেগারের প্রধান অংশ। ফেগারে দুইটি টার্মিনাল থাকে: লাইন টার্মিনাল ও আর্থ টার্মিনাল। মেগারের সাহায্যে সর্বনিম্ন ৫০০ কলা (KO) বা ০.৫ মেগাও (IMSI) সঠিক ভাবে মাপা যায়। উচ্চ রেজিস্ট্যাল বিশিষ্ট পদার্থকে কুপরিবাহী বা ইনসুলেটর (Insulator) বলে। মেগারের সাহায্যে ইনসুলেশন রেজিস্ট মাপা হয়। একারণে যেগারকে ইনসুলেশন টেস্টিং মেগারও বলে।
মেগারের সাহায্যে উচ্চ রেজিস্ট্যান্স বা ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স মাপা ছাড়াও সুইচের পোলারিটি টেস্ট ও ওয়্যারিং এর কন্টিনিউটি টেস্ট করা যায়।
মেগার একটি পারমানেন্ট ম্যাগনেট মুভিং কয়েল টাইপ ইনস্ট্রুমেন্ট । এই যন্ত্রে একটি ডিসি জেনারেটর ও একটি ওহম মিটার থাকে। ডিসি জেনারেটরটি ঘুরানোর জন্য যন্ত্রের বাহিরে একটি হাতল থাকে। ওহম মিটারের মধ্যে দুইটি কয়েল একই দন্ডের উপর সমকোণে আটকানো থাকে। একটি স্থায়ী চুম্বকের ক্ষেত্রের মধ্যে বসানো ঐ দন্ডটির মাথায় একটি মান নির্দেশক কাঁটা থাকে। কয়েল দুইটি হচ্ছে- প্রেসার কয়েল বা কন্ট্রোল কয়েল এবং কারেন্ট কয়েল বা ডিফ্লেকটিং কয়েল। কন্ট্রোল কয়েলের সাথে একটি কন্ট্রোল সার্কিট রেজিস্ট্যান্স সিরিজে সংযোগ করা থাকে এবং এই সমবায় জেনারেটরের লাইনে প্যারালালে সংযুক্ত থাকে। আবার ডিফ্লেক্টিং কয়েলের সঙ্গেও একটি ডিফ্লেক্টিং সার্কিট রেজিস্ট্যান্স সিরিজে সংযোগ করা থাকে। রেজিস্ট্যান্স যুক্ত ডিফ্লেক্টিং কয়েল সার্কিটের এক প্রান্ত জেনারেটরে নেগেটিভ (-ve) টার্মিনাল এবং অপর প্রান্ত মেগারের টেষ্টিং টার্মিনাল L এর সঙ্গে সংযোগ করা থাকে। জেনারেটরের পজেটিভ (+ve) টার্মিনাল মেগারের অপর টেষ্টিং টার্মিনাল E এর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ করা থাকে। এর জেনারেটিং ভোল্টেজ ৫০০ ভোল্ট কিংবা ১০০০ ভোল্ট হয়ে থাকে। এ অবস্থায় মেগারের হাতল ঘুরালে শুধু প্রেসার কয়েলের ভেতর দিয়ে কারেন্ট সরবরাহ হবে এবং স্থায়ী চুম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে ক্রিয়ার ফলে পয়েন্টারটি বামাবর্তে ঘুরে অসীম মান (o) দেখাবে। আবার মেগারের টেষ্টিং টার্মিনাল দুইটি শর্ট করে দিলে কারেন্ট কয়েলের ভেতর দিয়ে প্রচুর কারেন্ট প্রবাহিত হবে এবং স্থায়ী চুম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে ক্রিয়ার ফলে পয়েন্টারটি ডানাবর্তে ঘুরে শূন্য (০) মান দেখাবে। এর ব্যতিক্রম হলে বুঝতে হবে মেগার ঠিক নেই। যখন কোনো উচ্চ মানের রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করার জন্য রেজিস্ট্যান্সটিকে মেগারের L ও E টার্মিনালের সাথে কানেকশন দিয়ে হাতল ঘুরানো হয় তখন জেনারেটর হতে দুইটি কয়েলেই কারেন্ট প্রবাহিত হবে। দুইটি কয়েলের কারেন্টের অনুপাত অনুযায়ী পয়েন্টারটি ডানে বা বামে বিক্ষেপণ (Deflection) দিবে। রেজিস্ট্যান্স এর মান খুব কম হলে পয়েন্টারটি শূন্য মানের কাছাকাছি এবং রেজিস্ট্যান্স এর মান খুব বেশি হলে পয়েন্টারটি অসীম (Infinity, a) মানের কাছাকাছি অবস্থান করবে। এখানে উল্লেখ্য যে, মেগারের মধ্যস্থিত ডিসি জেনারেটরটি বাহিরের দিকের হাতলের সাথে সেন্ট্রিফিউগাল কাপলিং এর মাধ্যমে আটকানো থাকে। মেগারকে খুব দ্রুত ঘুরালেও এটি একটি নির্দিষ্ট আরপিএম এর বেশি গতিতে ঘুরবে না। মেগার ঘোরানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এর হাতলটি মুক্ত ভাবে ঘোরে। এসময় এতে নির্দিষ্ট ভোল্টেজ উৎপন্ন হবে। মেগারে লিকেজ প্রতিরোধ করার জন্য গার্ড রিং ব্যবহার করা হয়। পরিমাপকৃত রেজিস্ট্যান্সের মান অসীম হলে ডিফ্লেকটিং কয়েল সার্কিটে কোন কারেন্ট প্রবাহিত হয় না। শুধু কন্ট্রোলিং কয়েলের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয়। কন্ট্রোলিং কয়েলে কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ায় চৌম্বক ক্ষেত্র উৎপন্ন হয় এবং মিটারের কাঁটা অসীম (Infinity) দেখায়। আবার পরিমাপাধীন রেজিস্ট্যান্সের মান শূন্য হলে ডিফ্লেকটিং কয়েলের মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ কারেন্ট প্রবাহিত হয়, ফলে মিটার শূন্য (০) পাঠ দেয় ।
বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন ( ১৭০৬-১৭১০) প্রমাণ করেন যে, ইলেকট্রিক ডিসচার্জের কারণে বজ্রপাত (Lightning Stroke) সৃষ্টি হয়। মেঘ এবং আর্থের মধ্যে অথবা মেঘ ও মেঘের মধ্যে অথবা একই মেঘের চার্জ কেন্দ্রের মধ্যে বৈদ্যুতিক ডিসচার্জকে লাইটনিং বা বজ্রপাত বলা হয়। যখন মেঘের চার্জ ভূপৃষ্ঠের তুলনায় অথবা আশপাশের জন্য মেঘের তুলনায় খুব বেশি থাকে তখন লাইটনিং সংঘটিত হয়। কারণ এ সময় আশপাশের বাবুরের ইনসুলেশন ব্রেক করে লাইটনিং স্ট্রোকের সৃষ্টি হয়।
পৃথিবীতে প্রতিদিন হাজার হাজার লাইটনিং সহ ঝড় বৃষ্টি হয়ে থাকে। আবার সব লাইটনিং স্ট্রোক পৃথিবী পর্যন্ত এসে পৌঁছায় না, পথেই নিঃশেষ হয়ে যায়। লাইটনিং স্ট্রোক সাধারণত ওভারহেড বৈদ্যুতিক লাইন এবং আউটডোর সাব স্টেশনের উপর তুলনামুলক বেশি হয় । এছাড়া দালানের কার্নিশ, মসজিদ-মন্দির-গীর্জার চূড়া, বড়বড় গাছপালা, বাড়ি ঘর এমনকি মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী লাইটনিং স্ট্রোকের শিকার হয়। ওভারহেড লাইনের তার আকাশের নীচে খোলা অবস্থায় থাকে। একারণে এসব বৈদ্যুতিক লাইনের উপর যে কোন সময় বজ্রপাত ঘটতে পারে। বৈদ্যুতিক লাইনের উপর বজ্রপাত হলে লাইনের ভোল্টেজ ও ফ্রিকুয়েন্সি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ক্ষণস্থায়ী এই হঠাৎ ভোল্টেজ বৃদ্ধিকে সার্জ (Surge) বলে। ঐ সার্জ কারেন্ট বৈদ্যুতিক লাইন এবং লাইন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয় এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে প্রবেশ করলে সেগুলি পুড়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। এসব ক্ষতির হাত থেকে সরঞ্জামাদি রক্ষা করার জন্য দুই রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়। লাইনের উপরে আর্থ তার সংযোগ করা।
(১) লাইটনিং অ্যারেস্টার ব্যবহার করা। ওভার হেডলাইনে আর্থের তার সবচেয়ে উপরে থাকায় বজ্রপাত হলে তা আর্থের ভারের উপরে প্রথমে পড়বে। লাইন কন্ডাক্টরের উপর বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। আর্থের তারে বজ্রপাত হলে সার্জ কারেন্ট সরাসরি মাটিতে চলে গিয়ে যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জামের ক্ষতি রোধ করেতে পারে। কিন্তু যেখানে আর্থের তার টানা হয় না সেখানে লাইটনিং অ্যারেস্টার ব্যবহার করা হয়।
লাইটনিং অ্যারেস্টারের প্রধান কাজ হলো লাইনে বজ্রপাত হলে সার্জ কারেন্টকে সরাসরি মাটিতে নিয়ে যাওয়া। একাজের জন্য লাইটনিং অ্যারেস্টারের মোটামুটি তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক। যেমন-
(১) প্রত্যেক অ্যারেস্টারে এক বা একাধিক ফাঁক (gap) থাকবে যার ভেতর দিয়ে আর্ক হবে।
(২) আর্ক নেভানোর ব্যবস্থা;
(৩) স্বাভাবিক অবস্থায় অ্যারেস্টারের মধ্য দিয়ে কোন কারেন্ট প্রবাহ না হওয়া।
বিভিন্ন ভোল্টেজে বিভিন্ন ধরনের লাইটনিং অ্যারেস্টার ব্যবহৃত হয় । এল.টি. লাইনে যে অ্যারেস্টার ব্যবহৃত হয় তার নাম হর্ণ-গ্যাপ অ্যারেস্টার।
সর্বাধিক প্রচলিত লাইটনিং অ্যারেস্টার হলো বর্ণ-গ্যাপ অ্যারেস্টার। ২.১২ নং চিত্রে হর্ণ-গ্যাপ অ্যারেস্টার দেখানো হয়েছে। একে এল.টি. লাইনে ব্যবহার করা হয়। এধরনের অ্যারেস্টারে হর্ণ এর মত দুইটি বাঁকানো তার থাকে। তার জ্বরের নিচের দিক থেকে উপরের দিকে দূরত্ব বাড়তে থাকে। বর্ণের নিচের দিকে এমনভাবে ফাঁকা রাখা হয়-
যেন সাধারণ লাইন ভোল্টেজের সেড় বা দ্বিগুণ ভোল্টেজ না হলে কারেন্ট ঐ ফাঁকা জারণা অতিক্রম করতে না পারে। হর্ণ দুইটি একটি ইনসুলেটরের উপর বসানো থাকে। একটি হর্ণকে আর্থের তার দিয়ে কোনো একটি আর্থ ইলেকট্রোডের সঙ্গে জুড়ে দিতে হয়। অপর হর্ণটিতে এক দিকে লাইনের তার এবং অন্যদিকে যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম প্রভৃতি থেকে আগত তার সংযুক্ত থাকে। অ্যারেস্টার কে আরো কার্যকরী করার জন্য পাতি এবং হর্ণের মধ্যে একটি চোকিং করে লাগানো থাকে। এর ফলে লাইটনিং কারেন্ট (সার্জ কারেন্ট) যন্ত্রপাতির দিকে যেতে বেশি বাঁধা পায়। যখন লাইনের ভোল্টেজ স্বাভাবিক থেকে দ্বিগুনেরও বেশি হয় তখন এই ফাঁকের মধ্যে স্ফুলিঙ্গ (arc) সৃষ্টি হয় এবং কারেন্ট ভূমিতে চলে যায়। খুনিদের জায়গায় বাতাস গরম হয়ে উপরের দিকে যেতে থাকে এবং তাতে আর্ক ও উপরের দিকে উঠে যেতে থাকে। স্ফুলিঙ্গ যত উপরের দিকে ওঠে তত লম্বা হয়ে যায় এবং এক সময় দৈর্ঘ্য এত বেশি হয় যে লাইন ভোল্টেজ স্কুলিজটিকে আর ধরে রাখতে পারেনা। ফলে এক পর্যায়ে এটি নিভে যায় ।
দেখা গেছে, হর্ণ-গ্যাপ অ্যারেস্টারের মধ্য দিয়ে আনুমানিক ১০ অ্যাম্পিয়ারের বেশি কারেন্ট গেলে স্ফুলিঙ্গ বহু হয় না। কারেন্টের মান ১০ অ্যাম্পিয়ারের মধ্যে রাখার জন্য হর্ণগ্যাপ অ্যারেস্টারের সঙ্গে প্রয়োজন মতো রেজিস্ট্যান্সকে সিরিজে সংযোগ করা হয়।
আর্থ পিকেজ সার্কিট ব্রেকার একটি রক্ষশয্যা বা প্রটেকটিভ ডিভাইস যা বৈদ্যুতিক লিকেজজনিত ত্রুটিপূর্ণ সার্কিটকে ত্রুটিহীন অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিপদজনক অবস্থা থেকে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও ব্যবহারকারীকে নিরাপদ রাখে। সার্কিটের লিকেজ কারেন্ট ব্রেকারের মধ্য দিয়ে ভূমিতে প্রবাহিত হয়ে লাইনকে বিচ্ছিন্ন করে বলে একে আর্থ পিকেজ সার্কিট ব্রেকার বা সংক্ষেপে ইএলসিবি (ELCB) বলে। আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার তিন প্রকার: (১) এক পোল, (২) দুই গোল ও (৩) চার গোল বিশিষ্ট আর্দ্র লিকেজ সার্কিট ব্রেকার।
আমরা জানি কোনো কিছুর ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে যে বাঁধা সৃষ্টি হয় তাকে রোধ (Resistance) বলে। আসলে ডি. সি বিদ্যুৎ প্রবাহের ক্ষেত্রে যে বাঁধা সৃষ্টি হয় তাকে বলে রোধ। অন্যদিকে এসি সার্কিটের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ প্রবাহের বাঁধাকে ইম্পিডেন্স (Impedance) বলে। ইম্পিডেন্স ও রেজিস্ট্যান্স উভয়েরই একক ওহম। ইম্পিডেন্সের মান এসি প্রবাহের কম্পাংকের উপর নির্ভর করে। কোন বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনার আর্থ লুপ ইম্পিডেন্স (Earth Loop Impedance) বলতে ঐ ব্যবস্থাপনায় আর্থ-ফন্ট সার্কিটে কারেন্ট বা বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য সমগ্র বাঁধাকে বুঝায়। দোষমুক্ত অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে কার্যকরী করতে হলে আর্থ ইম্পিডেন্সের মান ঐ ব্যবস্থাপনার আর্থ ভোল্টেজ ও ফিউজের গলন কারেন্টের ভাগফলের চেয়ে সব সময়ই কম থাকতে হবে।
যেখানে আর্থ ইম্পিডেন্সের সন্তোষজনক মান পাওয়া সম্ভব হয়না সেক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির বডি আর্থিং এর উদ্দেশ্য সফল করার জন্য আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার সংযুক্ত করা হয়। আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকারের কয়েল বা রীলেকে ওয়্যারিংয়ের আর্থ সার্কিটের সঙ্গে সিরিজে সংযোগ করতে হয়। সার্কিটে কারেন্ট লিকেজ হলে তা যন্ত্রের রিলের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে আর্থে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে সংযুক্ত সার্কিট ব্রেকার লাইন বন্ধ করে দেয়। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারকারীকে লিকেজ জনিত কারেন্টের শক থেকে সুরক্ষা দিতে এটি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ব্রেকার অপারেশনে লিকেজ সার্কিট আলাদা হয়ে যায়। পাওয়ার সার্কিটে এ ধরনের সার্কিট ব্রেকারের গুরুত্ব খুব বেশি।
আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রটেকটিভ ডিভাইস। এর মধ্যে টেষ্ট রেজিস্ট্যান্স, ট্রিপিং কয়েল, পুশ সুইচ ও কন্ট্যাক্ট পাত থাকে। আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার রিলে বা কয়েলকে ওয়্যারিং এর আর্থ সার্কিটের সাথে সিরিজে সংযোগ করতে হয়। এ ধরনের সার্কিটে সলিড স্টেট ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকারে একটি টেস্টিং বাটন থাকে, যার মাধ্যমে ব্রেকারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা যায়। আর্থ লিকেজ সার্কিট ব্রেকার-এর সুইচের আর্থ টার্মিনাল আর্থ ইলেকট্রোডের সাথে ইনসুলেটর দিয়ে সংযুক্ত করতে হয়। যখন সার্কিটের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত কারেন্ট লিক করে তখন আর্থ লিকেজ ব্রেকারের রিলের মধ্য দিয়ে লিকেজ কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার সময় আর্মেচার টেনে রাখে এবং সুইচের পাত অন্য সার্কিটের সাথে সংযোগ করে দেয়। এর ফলে যে সার্কিটে কারেন্ট লিক করছিল সেটি খুলে যায় এবং দুর্ঘটনা ছাড়াই কারেন্ট প্রবাহ বন্ধ হয়। অপেক্ষাকৃত ছোট বাড়ির ওয়্যারিং-এ এটি ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না।
আমর প্রতিনিয়ত নানাভাবে শক্তি ব্যবহার করি। যানবাহন, কলকারখানা, পানির পাম্প, ফ্যান, রান্নার কাজ সবকিছুতেই শক্তির প্রয়োজন হয়। শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না। আমরা যখন কারখানায় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি সচল রাখি, গাড়ি চালাই অথবা মেশিনের সাহায্যে ধান মাড়াই করি তখন শক্তি একরূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তিত হয়। তোমরা কী বলতে পারবে আমাদের প্রয়োজনীয় এতসব শক্তি আমরা কোথা থেকে পাই? আসলে আমরা যে শক্তি ব্যবহার করি তার বেশিরভাগ আসে জীবাশ্ম জ্বালানী (Fossil fuel) থেকে। এমনকি তুমি এই বইটি যে আলোতে এখন পড়ছ তার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎশক্তিও উৎপাদিত হয়েছে কোন একটি জেনারেটরে জীবাশ্ম জ্বালানী তথা গ্যাস, কয়লা বা পেট্রোলিয়াম পুড়িয়ে। তবে বর্তমান এবং আগামী দিনের মানুষের জন্য সংকট হলো পৃথিবীর জীবাশ্ম জ্বালানীর ভান্ডার শেষ হয়ে আসছে। অধিক পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার আবার পরিবেশবান্ধবও নয়। একারণে দীর্ঘদিন যাবত মানুষ পরিবেশ বান্ধব, একবার ব্যবহার করলে শেষ হয়ে যাবে না, বারবার ব্যবহার করা যাবে অথবা সুদীর্ঘকাল সীমাহীনভাবে ব্যবহার করা যাবে, এমন শক্তি উৎসের সন্ধান করছে। শক্তির এধরনের উৎসকে বলে নবায়নযোগ্য শক্তি। বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রের ঢেউ অথবা সূর্য থেকে আসা শক্তি নবায়নযোগ্য শক্তির উদাহরণ। ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশে শক্তির উৎস হিসেবে সৌরশক্তির ব্যবহার একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। যানবাহন, কলকারখানাসহ অধিকাংশ যন্ত্রপাতি চলে বিদ্যুতের সাহায্যে। একারণে সৌরশক্তিকে সরাসরি ব্যবহারের চেয়ে বিদ্যুৎশক্তিতে রুপান্তর করে কাজে লাগানো অনেক বেশি সুবিধাজনক। সৌরশক্তিকে বিদ্যুতে রূপান্তরের জন্য সৌরকোষ (Solar Cell) বা ফটোভোল্টায়িক (Photovoltaic) কোষ ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে সৌরশক্তি ব্যবহারের প্রচলন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তোমরা হয়ত কোনো কোনো বাড়িতে সোলার প্যানেল দেখে থাকবে। সোলার প্যানেলের যথাযথ ব্যবহারের জন্য এর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই
অধ্যায়ে সোলার প্যানেল এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি যেমন ব্যাটারী, চার্জ কন্ট্রোলার, ইনভার্টার ইত্যাদি স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
পৃথিবীতে যত শক্তি আছে তার সবই কোনো না কোনোভাবে আসে সূর্য থেকে। সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে উদ্ভাবন করা হয়েছে সৌরকোষ বা সোলার দেন। সোলার সেল দুই ধরনের অর্গানিক ও ইনঅর্গানিক। সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে গাছের সবুজ পাতায় যে প্রক্রিয়া খাদ্য উৎপাদিত হয়, সৌরকোষের কার্যক্রম অনেকটা ভার মতোই। সৌর কোষে থাকে সূর্যালোক থেকে শক্তি সংগ্রাহক (Light Harvesting) অণু বা উপাংশ। সোলার প্যানেল ফটোভোল্টায়িক এনার্জি কনভার্সন পদ্ধতিতে কাজ করে। এই পদ্ধতিতে সৌরশক্তি সরাসরি সোলার সেলের মাধ্যমে একমুখী বৈদ্যুতিক প্ৰবাৰ (Direct Electric Current, DC current) উৎপন্ন করে। সোলার সেল হিসেবে p-টাইপ এবং এ-টাইপ সিলিকন ক্রিস্টালের জাংশন ব্যবহার করা হয়। সিলিকন এক ধরনের অর্ধপরিবাহী (Semiconductor) পদার্থ যার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার সময় আধানের বাহক হিসেবে কাজ করে ইলেকট্রন ও হোল (ইলেকট্রনের শূন্যতা)। p-টাইপ সিলিকন ক্রিস্টালে হোল (Hole) এবং n-টাইপ ক্রিস্টালে ইলেকট্রনের আধিক্য থাকে।
পি-এন (p-1) জাংশন এলাকায় অর্থাৎ p-টাইপ এবং n-টাইপ সিলিকন ক্রিস্টাল যেখানে মিলিত হয়, সেই জায়গায় ইলেকট্রন হোলের সাথে মিলিত হয়ে বাহুক শূন্য অবস্থার সৃষ্টি করে। একারণে পি-এন (p-1) জাংশন বরাবর রোধ অনেক বেশি হয়। পি-এন (p-1) আংশনের একপাশে নেগেটিভ চার্জ এবং অপরপাশে পজিটিভ চার্জের ঘনত্ব বেশি থাকায় জাংশন বরাবর একটি বিভব ঢালের (Potential gradient) সৃষ্টি হয়। পি-এন (p-1) জাংশনের উপর আলো পড়লে আলোক শক্তি ইলেকট্রন ও হোলকে (p-1) জাংশনের বিভব চালের বিপরীতে স্থানান্তর ঘটায়। এই প্রক্রিয়ায় কিছু কাজ সম্পন্ন হয় যা বিদ্যুৎ শক্তি হিসেবে সঞ্চিত হয়। সঞ্চিত বিদ্যুৎ শক্তির পরিমাণ আলোর তীব্রতা ও আলোকিত ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে। সৌরকোষ বা সোলার সেলের সাহায্যে দিনের বেলা সঞ্চয়ক কোষ বা সেকেন্ডারি সেল চার্জ করে রাখা হয় এবং রাতে ব্যবহার করা হয়। এক বর্গ সেন্টিমিটার সোলার সেল থেকে সর্বোচ্চ ২০-৪০ মিলি অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট পাওয়া যায়। প্রতিটি সোলার সেলে ০.৫ ভোল্ট থেকে ১০ ভোল্ট ডিসি ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। প্রকৃতপক্ষে এর পরিমাণ সোলার সেলে উপাদান ও সূর্যের আলোর উপর নির্ভর করে। একাধিক সোলার সেল প্রয়োজনমতো সিরিজ বা প্যারালাল সংযোগ করে ভোল্টেজ ও কারেন্ট বাড়ানো যায়।
আমাদের দেশ সৌরশক্তি ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানে প্রায় সারা বছরই সূর্যের আলো পাওয়া যায়। এছাড়া সোলার সেলে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সহজে স্থাপন করা যায় এবং এগুলোর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজ ও খরচ কম। সোলার সেল ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ হয় না এবং দুর্ঘটনা ঘটে না। এসব কারণে আমাদের মত জনবহুল দেশে সোলার সেল ব্যবহারের প্রচলন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আমাদের প্রাকৃতিক শক্তির উৎস খুবই সীমিত। সুতরাং সম্ভাব্য সবক্ষেত্রে সোলার প্যানেল ব্যবহার করলে জাতীয় সম্পদের উপর চাপ কমবে। সোলার ওভেন ব্যবহার করে সহজেই রান্নার কাজ করা যায়। অন্যান্য গৃহস্থালী কাজেও সোলার সেল থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ এর উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো দরকার।
সোলার প্যানেল সিস্টেমের প্রধান অংশগুলো নিম্নরুপ :
(ক) সোলার প্যানেল (Solar panel )
(খ) ব্যাটারি (Battery)
(গ) ইনভার্টার (Inverter)
(ঘ) চার্জ নিয়ন্ত্রক (Charge controller)
(ঙ) বৈদ্যুতিক লোড (Electric load)
(ক) সোলার প্যানেল (Solar panel )
সোলার প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সোলার সেল। মূলত সৌর শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরের মূল উপাদান সোলার সেল নামে পরিচিত। আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে সোলার সেল তৈরি করা হয়। সোলার সেল বা সোলার প্যানেলের বৈশিষ্ট্য হলো এর উপর সূর্যের আলো পড়লে সরাসরি বিদ্যুৎ শক্তি পাওয়া যায় । সোলার সেলে ডিসি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। বাজারে বিভিন্ন সাইজের সোলার প্যানেল পাওয়া যায়। একাধিক সৌর প্যানেলকে বৈদ্যুতিক ভাবে সংযোগ করে একটি কাঠামোর উপর স্থাপন করলে সামগ্রিক ব্যবস্থাকে সৌর প্যানেল বলে। একটি সৌর প্যানেল হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মান নির্ভর করে উক্ত প্যানেলের সোলার কোষের আয়তন ও সংখ্যার উপর। সাধারণত সৌর প্যানেলে ৩৬ টি সৌর কোষ সিরিজে যুক্ত থাকে। প্রতিটি সৌর কোষে ০.৫৬ ভোল্ট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। একটি সৌর প্যানেলের ৩৬ টি ০.৫৬ ভোল্ট যোগ করলে উৎপন্ন বৈদ্যুতিক ভোল্টেজের পরিমাণ হয় ১৯ থেকে ২১ ভোল্ট । অন্য দিকে কারেন্ট এর মান নির্ভর করে সৌর কোষগুলোর আয়তনের উপর। দুই ধরনের প্যানেল রয়েছে
(ক) সৌর-তাপ প্যানেল ও
(খ) ফটো ভোল্টাইক বা পিভি প্যানেল।
(খ) ব্যাটারি (Battery)
সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সৌর শক্তিকে সুবিধাজনক অন্য কোনো শক্তিরুপে সজ্জিত করে প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করা যায়। এ কাজে সচরাচর লেড এসিড ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। ব্যাটারীতে কতকগুলো ইলেকট্রো কেমিক্যাল সেল বা কোষ থাকে যার একটির সাথে অন্যটি সিরিজে বা প্যারালালে সংযুক্ত থাকে। ব্যাটারির সেল হলো ব্যাটারির মূল উপাদান। ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রুপান্তরিত করে সস্তি রাখা হয়। বিশেষ ব্যবস্থার রাসায়নিক শক্তিকে আবার বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করা হয়। সফর বাড়ানোর জন্য ব্যাটারি ব্যাংক ব্যবহার করা হয়। ব্যাটারি ব্যাংক হলো অনেকগুলো ব্যাটারির সমষ্টি। এই ব্যাটারিগুলো সিরিজ প্যারালালে সংযোগ করা যায়। ভোল্টেজ বাড়াতে চাইলে ব্যাটারিগুলোকে সিরিজে সংযোগ দিতে হয় এবং কারেন্ট বাড়াতে চাইলে ব্যাটারিগুলোকে প্যারালালে সংযোগ দিতে হয়।
(গ) ইনভার্টার (Inverter)
সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সাধারণত ভিসি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এই বিদ্যুৎ শক্তি দিয়ে চার্জ কন্ট্রোলারের মাধ্যমে ব্যাটারি ব্যাংকে রাসায়নিক শক্তি সঞ্চয় করা হয়। আমরা বসত-বাড়িতে সাধারণত এসি লোড ব্যবহার করি। একারণে ডিসি কারেন্টকে এসিতে কনভার্ট করতে হয়। ইনভার্টারের সাহায্যে ডিসি কারেন্টকে এসি কারেন্টে রূপান্তরিত (Convert) করা হয়। ৩.৪ ও ৩.৫ নং চিত্রে ইনভার্টার দেখানো হয়েছে।
(ঘ) চার্জ নিয়ন্ত্রক (Charge controller)
চার্জ নিয়ন্ত্রক ব্যাটারিতে জমাকৃত বিদ্যুৎ এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্যাটারির জীবনকাল সংরক্ষণ করে। এটি শক্তি রূপান্তরের প্রধান ইউনিট হিসেবে কাজ করে। চার্জ কন্ট্রোলার একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা ব্যাটারীকে অতিরিক্ত চার্জ এবং ডিসচার্জ হওয়া থেকে রক্ষা করে। চার্জ নিয়ন্ত্রক সার্কিটকে ব্যাটারী এবং প্যানেলের সঙ্গে প্যারালালে সংযোগ করা হয়। এছাড়াও চার্জ কন্ট্রোলার শর্ট সার্কিট হওয়া থেকে সিস্টেমকে রক্ষা করে। সোলার হোম সিস্টেমকে মনিটরিং করার জন্যও চার্জ কন্ট্রোলার এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
(ঙ) বৈদ্যুতিক লোড (Electric Load )
বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সামগ্রী যেমন টিভি, বাতি, ফ্যান, কম্পিউটার, মোবাইল, ক্যালকুলেটর, সেচযন্ত্র ইত্যাদি চালনার জন্য উৎপাদিত সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক কোনো ডিভাইসকে ব্যাটারির বা পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সাথে যুক্ত করলে যন্ত্রটির মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। এগুলোকে লোডবলে। অর্থাৎ যা ব্যাটারি বা অন্য কোনো উৎস থেকে বিদ্যুৎ শক্তি খরচ করে তাকে লোড বলে। লোড সাধারণত দুই প্রকার: এসি লোড ও ডিসি লোড। আবার লোডের ধরনের উপর ভিত্তি করে বৈদ্যুতিক লোডকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
১। রেজিস্টিভ লোড (Resistive load): যেমন বাতির ফিলামেন্ট একটি ডিসি লোড কারণ ইহা বিশুদ্ধ রেজিস্টিভ লোড (ইহাতে কোন ইন্ডাকটিভ রিয়াকট্যান্স বা ক্যাপাসিটিভ রিয়াকট্যান্স নাই)। এছাড়াও স্থির রেজিস্ট্যান্স, পরিবর্তনশীল রেজিস্ট্যান্স, সোল্ডারিং আয়রন, থার্মাল ওভার লোড রিলে ইত্যাদি রেজিস্টিভ লোড।
২। ইন্ডাকটিভ লোড (Inductive load): সার্কিটে বিশুদ্ধ ইন্ডাক্টর সংযুক্ত থাকলে ইন্ডাকটিভ রিয়াকট্যান্সের কারণে এসি বা পরিবর্তনশীল বিদ্যুৎ প্রবাহে বাঁধার বা রোধের সম্মুখীন হয়, কিন্তু ডিসি বা স্থির মানের কারেন্টের জন্য এই রোধের পরিমাণ শূন্য। এসব ক্ষেত্রে লোডের মান ব্যবহৃত এসি কারেন্ট এর কম্পাংকের সমানুপাতিক (X1=2rfL)। এসি লোড সৃষ্টি করে এমন কয়েকটি বস্তু হলো চোক কয়েল, ফ্যান, মোটর, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার ইত্যাদি।
৩। ক্যাপাসিটিভ লোড (Capacitive Lond) : ক্যাপাসিটর বা কনডেলার, ক্যাপাসিটর ব্যাংক, সিনক্রোনাস মোটর ও ফেইজ অ্যাডভানসার ইত্যাদি।
প্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতিগুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো-তাপবিদ্যুৎ, পানিবিদ্যুৎ, ডিজেল ইঞ্জিন দ্বারা উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইত্যাদি। সোলার প্যানেল সিস্টেমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এর যেসব সুবিধা পাওয়া যায় তাহলো:
১. সহজে স্থাপন, সম্প্রসারণ, এবং হস্তান্তর যোগ্য।
২. বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় খুব কম। তবে এখনো প্রতি একক ইউনিট বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে মূল্য (খরচ) প্রচলিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থেকে অনেক বেশি। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য (খরচ) যথাক্রমে ৩২.০০ ও ৫.৭২ টাকা।
৩. চলতি খরচ বা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ খুবই কম।
৪. নির্ভরশীলতা বেশি ও পরিচালনা সহজ।
৫. বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই বলে ইহা অধিক নিরাপদ।
৬. শব্দহীন, গন্ধহীন এবং পরিবেশ দূষণ মুক্ত রাখে ।
৭. জ্বালানি খরচ নেই, সহজে নষ্ট হয় না এবং প্যানেল স্থাপন ব্যয় কম।
৮. কৃত্রিম উপগ্রহে সৌর শক্তি ব্যবহারের অনেক সুবিধা পাওয়া যায় ।
৯. লোডের নিকটে স্থাপন করা যায় বলে পরিবহন ব্যয় নেই বললেই চলে।
১০. বায়ুমণ্ডল স্বাভাবিক থাকলে এনার্জির উৎস চিরস্থায়ী।
সোলার এনার্জি ব্যবহারের অনেক সুবিধা থাকলেও বাস্তবে এ শক্তির রূপান্তর বা সঞ্চয় ব্যাপক ভাবে সম্ভব হচ্ছে না। এ শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহারে কিছু অসুবিধা বিদ্যমান। প্রাথমিক খরচ খুব বেশি এবং আবহাওয়া জনিত কারণে এবং রাতে সূর্যের আলোর অনুপস্থিতে এনার্জি উৎপাদন সম্ভব হয় না। সরকার সৌর শক্তি ব্যবহারের উপর ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে এবং দিনদিন/ক্রমান্বয়ে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে সরকার আধুনিক অবকাঠামো স্থাপনায় সৌর সিস্টেম স্থাপনে গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে সোলার বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদনের পরিমাণ ১৭৪ মেগাওয়াট যা দেশের মোট উৎপাদনের মাত্র ১.১ শতাংশ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সোলার বিদ্যুৎ খাত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে ২০২৪-২৫ সালে ১০০০ মেগাওয়াট (এক গিগাওয়াট) উৎপন্ন ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প চালুর লক্ষ্যমাত্রায় কাজ করা উচিত। বর্তমানে ব্যবহৃত সোলার প্যানেলের দক্ষতা খুবই কম; মাত্র ২২-২৪%। বাজারে বেশি দক্ষতার সোলার সেল পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতে উন্নত মানের বেশি দক্ষতার সোলার সেল সহজলভ্য হবে এবং এ পদ্ধতিতে এনার্জি উৎপাদনের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
একটি সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপনের সময় নিম্নলিখিত বিষয় সমূহের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে।
(ক) আলোর পর্যাপ্ততা :
দিনের অধিকাংশ সময় বা সারাদিন যে স্থানে সূর্যের আলো থাকে সে স্থানে প্যানেল স্থাপন করতে হবে। অর্থ্যাৎ যেখানে উন্মুক্তভাবে সূর্যের আলো পড়ে সেখানে প্যানেল স্থাপন করতে হয়।
(খ) ভূমির সাথে হেলানো ভাবে স্থাপন:
সৌর প্যানেলকে দক্ষিণ মূখী করে ভূমির সাথে ২৩° ডিগ্রী কোণে হেলানো ভাবে স্থাপন করতে হবে। উল্লেখ্য যে, এ কৌণিক পরিমাপ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে (বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন সূর্যের আলো খাড়া ভাবে পড়ে এবং শীত কালে তীর্যক ভাবে পড়ে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে প্যানেলকে বিভিন্ন কোণে স্থাপন করা কষ্টকর ও ঝামেলাপূর্ণ কাজ । এজন্য বিশেষজ্ঞগণ জানুযারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কৌণিক বিশ্লেষণ করে একটি গড় কৌণিক অবস্থান নির্ধারণ করেছেন। এ অবস্থায় প্যানেল স্থাপন করলে গড়ে বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এ কৌণিক পরিমাপ হচ্ছে ভূমির সাথে ২৩°।
(গ) প্যানেলের উপর ছারা এবং আলোর প্রতিবন্ধকতা:
কোন অবস্থাতেই যাতে প্যানেলের উপর ছায়া না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ছায়া পড়লে বা আলোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে প্যানেল পূর্ণ দক্ষতার কাজ করতে পারে না। অর্থ্যাৎ প্যানেলের বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যায়।
(ঘ) প্যানেল ও ব্যাটারি দূরত্ব :
ব্যাটারি ও প্যানেলের মধ্যে দূরত্ব যথাসম্ভব কম রাখা উচিত। কোন অবস্থাতেই ৩০ ফুটের বেশী হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। ২০-২৫ ফুটের মধ্যে থাকাই ভালো। কারণ এই বিদ্যুৎ ঘর ক্ষমতা সম্পন্ন এবং বিদ্যুতের পরিমাণও খুব অল্প। তাই ব্যাটারি ও প্যানেলের দূরত্ব যত বেশী হবে পরিবাহী রেজিস্ট্যান্স ও ভোল্টেজ ড্রপ তত বেশি হবে । অর্থাৎ বিদ্যুতের অপচয় ঘটবে ফলে সিস্টেমের কর্ম সক্ষতা কমে যাবে ।
গ্রীষ্ম কালে সূর্য উলম্ব ভাবে থাকে এ কারণে হেলানো কোনের পরিমাণ কম হলে ভাল। এজন্য সোলার প্যানেলকে প্রায় মাটির সমান্তারালে রাখতে হয়। বসন্তকালে ভূমির অক্ষাংশের সমান ২৩০ ডিগ্রী কোণে কাত করে বসাতে হবে। এরপর সংযোগ তার দুটি মাটির ভিতর দিয়ে নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের সাথে সংযোগ করতে হবে। সংযোগ বাক্সে ব্যাটারি এবং চার্জ কন্ট্রোলার যথা নিয়মে যুক্ত করতে হবে।
১. ব্যবহারকারীর চাহিদা মোতাবেক ব্যাটারি সংগ্রহ করতে হবে ।
২. উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে ব্যাটারি নির্মাতা কর্তৃক নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাটারি স্থাপন করতে হবে।
৩. ব্যাটারির চার্জ ও ডিসচার্জ রেটিং অনুযায়ী উপযুক্ত মানের চার্জ কন্টোলার সংগ্রহ করতে হবে।
৪. প্রথমে যেখানে সিষ্টেম লাগাতে হবে সেই জায়গার একটি ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম করতে হবে ।
৫. চার্জ কন্ট্রোলারের সহিত ব্যাটারি, সোলার প্যানেল ও লোড ড্রয়িং অনুযায়ী বৈদ্যুতিক সংযোগ করতে হবে।
৬. চার্জ কন্ট্রোলারটি উপযুক্ত স্থানে ক দিয়ে সঠিকভাবে স্থাপন করতে হবে ।
৭. প্যানেল স্থাপনের জন্য খোলাজায়গা অর্থ্যাৎ বাড়ির যে স্থানে সূর্যোদয় থেকে সূর্যান্ত পর্যন্ত আলো থাকে সে স্থানে প্যানেল স্থাপন করতে হবে।
৮. ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম অনুযায়ী প্রথম কন্ট্রোলার লাগাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কন্ট্রোলার থেকে প্যানেলের দূরত্ব যেন ২৫ ফুটের বেশি না হয় ।
৯. প্রথমে চার্জ কন্ট্রোলারের সাথে ব্যাটারি সংযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে নেগেটিভ (-) সংযোগ অতঃপর পজিটিভ (+) সংযোগ দিতে হবে। প্যানেলের সংযোগ দেওয়া মাত্র (দিনের বেলা) চার্জ কন্টোলারের চার্জিং লাইটটির এলইডি জ্বলে উঠবে।
১০. সর্বশেষে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের (লাইট, টিভি) সংযোগগুলিকে পর্যায়ক্রমে চার্জ কন্ট্রোলারের সাথে সংযোগ দিতে হবে।
(১) সকল সুইচ ও ফিউজ পর্যবেক্ষণ
সুইচ ও ফিউজ পরীক্ষা করে ঢিলা সংযোগ থাকলে পুনঃ সঠিক সংযোগ করা বা পরিবর্তন করা, তার ভাঙ্গা বা সংযোগ খোলা থাকলে পূনঃ সংযোগ করা ইত্যাদি।
(২) লোড পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষণ
(ক) ক্ষমতার অতিরিক্ত কোন লোড সংযোগ দেওয়া যাবে না ।
(খ) কোন অবস্থাতেই লোডের অবস্থান ২৫ ফুটের অধিক দূরত্বে হবে না।
(গ) ব্যাটারিপ্রাপ্ত ও লোডে প্রান্তে ভোল্টেজ পার্থক্য ০.২৫ ভোল্ট এর অধিক হবে না।
(৩) ব্যাটারি পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ
(ক) পরিচ্ছন্নতা, বায়ুচলাচল, সেল এবং কানেক্টরগুলোতে বাহ্যিক করোশন ইত্যাদি। (খ) চার্জ কারেন্ট (প্যানেলের নির্দেশিকা অনুসারে) এবং চার্জ ভোল্টেজ ১৩.৫ ভোল্ট থেকে ১৫.৫ ভোল্ট থাকতে হবে।
(গ) ব্যাটারি যথেষ্ট পরিমাণ কারেন্ট সরবরাহ করতে সক্ষম হতে হবে।
(৪) চার্জ কন্ট্রোলার পর্যবেক্ষণ
(ক) চার্জ কন্ট্রোলার এর ইনপুট-এ ইন্ডিকেটর এলইডি জ্বলে কি না ;
(খ) চার্জ কন্ট্রোলার এর ইনপুট-এ প্রাপ্ত ভোল্টেজ 13.5 V- 15.5 Vআছে কি না ;
(গ) ব্যাটারী স্ট্যাটাস ইন্ডিকেটর এলইডি জ্বলে কিনা?
(ঘ) চার্জ কন্ট্রোলার এর আউটপুট-এ লোড ভোল্টেজ 13.5 V-15.5 V আছে কি না ;
এসি ও ডিসি তড়িৎ শক্তির মধ্যে ডিসি তড়িৎ শক্তির নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। এ শক্তি একসাথে বেশি পরিমাণে উৎপন্ন করা যায় না কিন্তু এ শক্তির প্রয়োজনীয়তা অনেক ক্ষেত্রেই অপরিহার্য। ভিসি তড়িৎ (বিদ্যুৎ) উৎপন্নের ক্ষেত্রে প্রধান উৎস সেল বা বিদ্যুৎ কোষ। যে যন্ত্রের সাহায্যে রাসায়নিক শক্তি থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহ পাওয়া যায় তাকে বৈদ্যুতিক সেল বা বিদ্যুৎ কোষ বলে। বিদ্যুৎ কোষ বা সেল মূলত ইলেকট্রো-কেমিক্যাল বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট। বিদ্যুৎ কোষ প্রধানত দু'ধরনের হয়। প্রাইমারি বা মৌলিক সেল (Primary Cell) এবং সেকেন্ডারি বা সক্ষরক সেল (Secondary Cell)। সেলে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ ও ইলেকট্রোড এর উপর ভিত্তি করে সেলের বিভিন্ন নামকরণ করা হয়ে থাকে। এর বহুবিধ সুবিধার জন্য দিন দিন এর ব্যবহার বেড়েই চলছে।
সেলের উপাদান দুইটি। যথা-
(ক) পজিটিভ ও নেগেটিভ ইলেকট্রোজ
(খ) রাসায়নিক পদার্থ বা ইলেকট্রোলাইট।
কতকগুলো তড়িৎ কোষ বা সেল এর সংযোগকে ব্যাটারি বলে। ব্যাটারিতে একাধিক সেল যুক্ত থাকে। সাধারণভাবে প্রতিটি ড্রাই সেলে ১.৫ ভোল্ট, লেড এসিড সেলে ২.২ ভোল্ট উৎপন্ন হয় এবং উৎপাদিত শক্তির পরিমাণ সীমিত। চিত্রে ব্যাটারির প্রতীক ও গঠন দেখানো হলো।
ভোল্টেজ বা কারেন্টের পরিমাণ বা উভয়ই বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেলের সংযোগ করে ব্যাটারি তৈরি করা হয়। ভোল্টেজ বৃদ্ধি করতে সেলের সিরিজ সংযোগ, কারেন্ট বৃদ্ধিতে প্যারালাল সংযোগ এবং ভোল্টেজ ও কারেন্ট বৃদ্ধিতে মিশ্র সংযোগ করা হয়। সংযুক্ত সেলের পরিমাণ লোডের চাহিদার উপর নির্ভর করে।
১। প্রাইমারি বা মৌলিক সেল (Primary Cell)
যে সেল বা বিদ্যুৎ কোষ এর শক্তি একবার শেষ হলে চার্জ করে পুনরায় ব্যবহার করা যায় না, তাকে প্রাইমারি সেল বা মুখ্য কোষ বলে। লেকল্যান্স সেল, ড্যানিয়েল সেল এবং ড্রাই সেল ইত্যাদি প্রাইমারি সেলের শ্রেণিভুক্ত। বর্তমানে এ ধরনের সেলের ব্যবহার সীমিত। এ ধরনের সেল ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, টর্চলাইট ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের সেল হতে একই রকম ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যায় না। ব্যবহারের ফলে ক্ষমতা শেষ হওয়ার আগেই ভোল্টেজ কিছুটা কমে যায়।
২। সেকেন্ডারি সেল বা সঞ্চয়ক সেল (Secondary Cell)
যে সেল বা বিদ্যুৎ কোষ এর শক্তি একবার শেষ হলে তা পুনরায় চার্জ করে ব্যবহার করা যায়, তাকে সেকেন্ডারি সেল বলে বা সঞ্চয়ী বিদ্যুৎ কোষ বলা হয়। চার্জের দ্বারা বিদ্যুৎ শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে এবং ব্যবহারের সময় রাসায়নিক শক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ব্যবহারের পর চার্জ শেষ হলে আবার চার্জ করে উক্ত সেল পুনরায় ব্যবহার করা যায়।
যে সেল বা বিদ্যুৎ কোষে ইলেকট্রোলাইট হিসেবে ড্রাই বা পেস্ট বা জেলির ন্যায় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় তাকে ড্রাই সেল বলে। ড্রাই সেল বাস্তবে ড্রাই নয়, কারণ ইলেকট্রোলাইট ড্রাই হলে ড্রাই সেল বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করতে পারে না। বাহ্যিক সাইজ অনুসারে ড্রাই সেল তিন ধরনের হয়।
(ক) ডি-টাইপ, (খ) মিডিয়াম টাইপ এবং (গ) পেন্সিল টাইপ।
যে অংশগুলো সমন্বয়ে ড্রাই সেল গঠিত সেগুলো নিম্নরূপ ঃ
(ক) কার্বন দণ্ড (খ) ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইড (গ) দস্তার পাত্র (ঘ) তামার ক্যাপ (ঙ) অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (চ) চোষক কাগজ (ছ) শক্ত কাগজ ও গালা বা পিচ, বালি ইত্যাদি।
ড্রাই সেলে নেগেটিভ ইলেকট্রোড হিসেবে দত্তার পাত্র ব্যবহার করা হয় এবং পজিটিভ ইলেকট্রোড হিসেবে সঠিক মাপের কার্বন দণ্ড ব্যবহার করা হয় যা দস্তার পাত্রের মধ্যে বসানো থাকে। এ দন্ডের উপরে পিতল বা তামার ক্যাপ লাগানো থাকে। দস্তার পাত্রে ইলেকট্রোলাইট হিসেবে পেস্ট বা জেল এর ন্যায় অ্যামেনিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয়। কার্বন দণ্ডের চারপাশে ডিপোলারাইজার হিসেবে ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়, যা সেলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার উৎপাদিত পানিকে চুষে নেয়। তা না হলে দত্তার পাত্র জিংক ক্লোরাইডে পরিণত হয়ে ইলেকট্রোলাইট লিক করতে পারে। কখনও কখনও ড্রাই সেল লিকপ্রুফ করার জন্য দস্তার পাত্রের চারদিকে ইস্পাতের পাতলা পাত দিয়ে মোড়ানো থাকে। ইলেকট্রোলাইট যেন শুকিয়ে না যায় তার জন্য সেলের উপরি ভাগ গালা দিয়ে বন্ধ করা হয়। পিতলের বা তামার ক্যাপ ও গালার মাঝে খুব সামান্য ফাঁক থাকে যাতে গ্যাস সৃষ্টি হলে বের হতে পারে। এ স্থানে অনেক সময় বালি দেওয়া হয়। এর উপর মোটা চোষক কাগজ দিয়ে মোড়ানো হয় এবং তার উপর প্রতিষ্ঠানের লেবেল লাগানো থাকে। প্রতিটি ড্রাই সেলের ইএমএফ ১.৫ ভোল্ট হয়। এ ধরনের সেলের বিদ্যুৎ ক্ষমতা খুব কম হয়ে থাকে।
চিত্রে একটি ড্রাই সেলের অভ্যন্তরীণগঠন দেখানো হলো।
যে সকল কাজে ড্রাই সেল ব্যবহার করা হয় তা হলো-
১। ইলেকট্রনিক ঘড়িতে
২। ক্যালকুলেটরে
৩। টর্চ লাইটে
৪। ক্যামেরায়
৫। রিমোটে
৬। রেডিও এবং টেপ রেকর্ডারে
৭। বিভিন্ন পরিমাপক যন্ত্রে ।
৮। বিভিন্ন খেলনায়
সেকেন্ডারি বা সঞ্চয়ী সেল (Secondary Cell) : যে সকল সেল একবার কাজে ব্যবহার করার পর এর সঞ্চিত শক্তি শেষ হয়ে গেলে আবার চার্জ করে কাজের উপযোগী করা যায়, সেই সকল সেলকে সেকেন্ডারি সেল বলে। এ জাতীয় সেলকে সঞ্চয়ী সেলও বলা হয়। সেকেন্ডারি সেলে বৈদ্যুতিক শক্তি রাসায়নিক শক্তিরূপে জমা থাকে, তাই একে স্টোরেজ সেল বলা হয়।
নিচের চিত্রে লেড-এসিড সেলের গঠন ও কার্যপ্রণালী চিত্রসহ বর্ণনা করা হলো।
*সেলের প্রধানত তিনটি অংশ থাকে। যথা- ১. বহি আবরণ বা সেলের কেস বা পাত্র।
২. ইলেকট্রোড :
(ক) পজিটিভ ইলেকট্রোড বা ধণাত্মক পাত বা অ্যানোড (Positive Electrode): বাদামি রঙের লেড পার-অক্সাইড পাত।
(খ) নেগেটিভ ইলেকট্রোড বা ঋনাত্মক পাত বা ক্যাথোড (Negative Electrode ) : সচ্ছিদ্র ধূসর স্পঞ্জ লেড ।
৩. ইলেকট্রোলাইট (Electrolite) : পাতলা সালফিউরিক এসিড।
১। বহি আবরণ:
এ সেলের বহি আবরণ ব্যাকলাইট, কঠিন রাবার অথবা কাঁচের তৈরি হয়ে থাকে। ইহা ব্যাটারির সব উপাদান ধারণ করে বলে একে ধারক বলে। ধারকে সেলের জন্য গ্রুপিং করা থাকে। ব্যাটারির ভোল্টেজ ক্যাপাসিটি সেল সংখ্যার উপর নির্ভর করে। প্রতিটি সেলের ভোল্টেজ ক্যাপাসিটি ২ ভোল্ট হয়। অর্থাৎ ১২ ভোল্ট ব্যাটারির জন্য ৬ টি সেল থাকে।
২। ইলেকট্রোড বা প্লেট (Electrode or Plates) :
পজিটিভ ও নেগেটিভ ইলেকট্রোড এন্টিমনি-লেড অ্যালয়ের শক্ত কাঠামো দ্বারা গঠিত, যাতে অ্যাকটিভ বা ক্রিয়াশীল পদার্থ চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে লাগানো হয়। অ্যাকটিভ বা ক্রিয়াশীল পদার্থের প্রধান উপাদান হলো লেড-অক্সাইড। এ প্রক্রিয়ায় পজিটিভ প্লেট লেড পার-অক্সাইডে রূপান্তরিত হয় এবং গাঢ় বাদামি রং ধারণ করে। নেগেটিভ প্লেটটি ছিদ্রযুক্ত ধূসর বর্ণের লেডে রূপান্তরিত হয়। প্রতিটি সেলে পজিটিভ প্লেটের চেয়ে নেগেটিভ প্লেট একটি বেশি থাকে এবং বহির্ভাগের দুইটি প্লেটই নেগেটিভ প্লেট।
নেগেটিভ প্লেটের মাঝে একটি পজিটিভ প্লেট থাকে। সেলে প্লেটের সংখ্যা যত বেশি হবে ব্যাটারির ক্ষমতা তত বেশি হবে।
৩। ইলেক্ট্রোলিটিক(Electrolytic):
শিল্প-এসিড গেলে ব্যবহৃত ইলেকট্রোলাইট হলো পাতলা সালফিউরিক এসিড প্রবণ। এটির আপেক্ষিক অয়ত্ব ১১২ থেকে ১.২৪ পর্যন্ত হয়।
৪। ডি-এসিত লেগে ন্যান্য অংশ
১.উপাদান :
এ সেলের ধারণ ক্ষমতা গ্রেটের ক্ষেত্রফলের উপর বা আয়তনের উপর নির্ভর করে। প্লেটের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধির জন্য প্লেটগুলো আকার আকৃতিতে বৃহৎ করার পরিবর্তে এক এল পরিটিভ এবং এক এল নেগেটিভ প্লেট ব্যবহার করা হয় এবং সেগুলো অভ্যন্তরীণ ভাবে সংযোগ করে গ্রুপ ভিত্তিক একত্র করা থাকে। এরপর এ দুইটি চালকে একটা কোষে আবদ্ধ করা হয়, যাকে উপাদান বলে।
১। নেগেটিভ প্লেট ২। সেপারেটর ৩। পজিটিভ প্লেট ৪। পজিটিভ প্লেটগ্রুপ ৫। নেগেটিভ প্লেটগ্রুপ ৬। গ্রুপ সার্পোট ৭। লগ ৮। প্লেট গ্রুপ ৯। গার্ড স্ক্রিন ১০। গার্ড প্লেট ১১। সেল কভার ১২। প্লাগ ওয়াশার ১৩। ভেণ্টপ্লাগ ১৪। অভ্যন্তরীণ সেল কানেকটর ১৫। টার্মিনাল ১৬। স্কু।
২. সেপারেটর (Separator)
পজিটিভ ও নেগেটিভ প্লেটের মধ্যে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে যেন না ঘটে সে লক্ষ্যে অপরিবাহি পদার্থের তৈরি পাত উভয় প্লেটের মাঝখানে ব্যবহৃত হয় যাকে সেপারেটর বলে। এ সেপারেটরগুলো বিশেষভাবে সরু খাঁজ কাটা ছিদ্রযুক্ত কাঠের, রবারের বা কাঁচের তৈরি হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক কাঠকে গরম ক্ষারীয় দ্রবণে ডুবানো হয়, যাতে কাঠের ভিতরকার এসিটিক এসিড এবং অন্যান্য উপাদান দূরীভূত হয়। সেপারেটরগুলোকে সব সময় আর্দ্র রাখা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে পাতলা ছিদ্র কঠিন রাবারের শিট কাঠের সেপারেটরের সাথে ব্যবহৃত হয়। কখনও কখনও কাঁচ ও কাঠ সেপারেটর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চিত্র ৩.১৮ এ সেপারেটর দেখানো হয়েছে।
৩. ভেণ্ট
প্রতিটি সেলের বহিঃআবরণের একটি করে ছিদ্র বা ভেণ্ট থাকে। যার ভেতর দিয়ে ইলেট্রোলাইট বা দ্রবণের নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় এবং প্রয়োজনের সময় দ্রবণে পানি দেওয়া হয়। সেল যখন কাজ করে, তখন ভেন্ট প্লাগ দ্বারা বন্ধ করা থাকে, যাতে দ্রবণ বাইরে আসতে না পারে। ভেন্ট প্লাগের উপরিভাগে একটি সরু ছিদ্র থাকে যেন চার্জিং এর সময় গ্যাস নির্গত হতে পারে। চার্জের সময় এটি অবশ্যই খুলে রাখতে হবে।
৪. ইন্টারনাল কানেকটর
সেলের পজিটিভ প্লেটসমূহ একত্রে এবং নেগেটিভ প্লেটসমূহ একত্রে সীসার পাত দিয়ে সংযুক্ত থাকে। এটিই ইন্টারনাল কানেকটর যা ঝালাই করে তৈরি করা হয়।
৫. এক্সটার্নাল কানেকটর
কতগুলো সেল দিয়ে ব্যাটারি তৈরির ক্ষেত্রে সেল গুলোর মধ্যে বাহিরের দিকে নিয়ম অনুযায়ী সংযোগের জন্য সীসার যে পাত দিয়ে সংযুক্ত হয় সেটিই এক্সটার্নাল কানেকটর।
নিচে লেড-এসিড সেলের (ব্যাটারির) ব্যবহারের তালিকা দেওয়া হলো:
১. মোটরগাড়ি (বাস, ট্রাক, লরী, কার, মাইক্রোবাস) চালু করার কাজে।
২. রেডিও, টেলিফোন একচেঞ্জ ইত্যাদি ক্ষেত্রে।
৩. আইপিএস এর সাথে।
৪. ইদানিংকালে মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলার চালাতে।
৫. রেলওয়ের সিগনাল সিস্টেমে।
৬. বৈদ্যুতিক পাওয়ার উৎপাদনের ক্ষেত্রে এবং এর কন্ট্রোল সিস্টেমে।
৭. সোলার সিস্টমে।
সঠিক পদ্ধতি ও সতর্কতার সাথে লেড-এসিড সেল (ব্যাটারি) চার্জ করলে ব্যাটারির সেল সমূহ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ব্যাটারি চার্জিং পদ্ধতির চিত্র ৩.১৯ এ দেখানো হয়েছে। চার্জের সময়ে সতর্ক পদক্ষেপ সমূহ নিম্নরূপ-
১. সঠিক পোলারিটিতে সংযোগ করতে হবে অর্থাৎ ব্যাটারির পজিটিভ সাপ্লাইয়ের সাথে পজিটিভ এবং ব্যাটারির নেগেটিভ সাপ্লাইয়ের সাথে নেগেটিভ সংযোগ করতে হবে ।
২. ডিসি সাপ্লাই দিয়ে চার্জ করতে হবে। চার্জিং ভোল্টেজ ব্যাটারির ভোল্টেজের চেয়ে বেশি হতে হবে। ৩. অল্প কারেন্ট প্রবাহে বেশি সময় ধরে চার্জ করতে হবে। এক্ষেত্রে তৈরিকারকের নির্দেশ মত ব্যাটারি চার্জ করা উচিত।
৪. চার্জের সময় ভেন্ট প্লাগ খুলে রাখতে হবে, যাতে বুদবুদ বা গ্যাস বের হতে পারে।
৫. সেলের এসিড লেভেল কমলে বিশুদ্ধ বা পাতিত (Distilled) পানি দিয়ে লেভেল সঠিক করে চার্জ করতে হবে। এক্ষেত্রে এসিড লেভেল প্লেটের ১৫ মি.মি. উপরে থাকা প্রয়োজন।
৬. চার্জের সময় হাইড্রোমিটার দিয়ে সেলের এসিডের আপেক্ষিক গুরুত্ব মাপতে হবে। ব্যাটারির পূর্ণ চার্জিং এ প্রতিটি সেলের আপেক্ষিক গুরুত্ব হবে ১.৩১ । ৭. ব্যাটারি চার্জের সময় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাস বের হয় বলে কাছে আগুন নেওয়া যাবে না।
৮. শরীর বা জামা কাপড়ে যেন এসিড না লাগে এবং দুর্ঘটনায় নিরাপত্তার জন্য কাছেই পর্যাপ্ত পানি রাখা প্রয়োজন।
হাইড্রোমিটারের দ্বারা ব্যাটারির ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব (Specific Gravity) পরিমাপ করা হয়। কোনো একটি পদার্থের আপেক্ষিক গুরুত্ব বলতে 4° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট আয়তনের পানির ভরের সাথে সম আয়তন বিশিষ্ট কোন একটি পদার্থ কতগুণ ভারি বা হাল্কা বুঝায়। লেড-এসিড সেল (ব্যাটারি) চার্জের সময় ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব পরিমাপ করা প্রয়োজন । একটি পূর্ণ চার্জ ব্যাটারির ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.২-১.৩ হয়ে থাকে। হাইড্রোমিটারের ভিতরে একটি কাঁচের নল আছে যেখানে তিনটি অংশ লাল, সাদা এবং সবুজ রং দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। টেস্টটিউব এর সাহায্যে ব্যাটারি হতে ইলেকট্রোলাইট তুলে আপেক্ষিক গুরুত্ব মাপা হয়।
সঞ্চয়ী ব্যাটারি নির্দিষ্ট কার্যকালের পর সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে, ব্যাটারি দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্ষম থাকে। ব্যাটারি দীর্ঘ মেয়াদী ত্রুটিযুক্ত ভাবে কাজ করার জন্য নিয়মিতভাবে পরিচর্যা করাকে ব্যাটারির রক্ষণাবেক্ষণ বলে। একে ব্যাটারি সার্ভেসিংও বলে। লেড-এসিড ব্যাটারির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাটারির কার্যকারীতা বৃদ্ধি করে এবং ব্যাটারিকে
দীর্ঘস্থায়ী করে। এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হলো- ১. ব্যাটারি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর্দ্র ও স্যাতস্যাতে জায়গায় ব্যাটারি রাখা যাবে না।
২. সঠিক পোলারিটি, সঠিক ভোল্টেজ ও কম কারেন্ট এ চার্জ করতে হবে। মোচার্জিং ব্যাটারিকে দীর্ঘস্থায়ী
করে। ৩. চার্জের সময় হাইড্রোমিটার দিয়ে প্রতিটি সেলের এসিডের আপেক্ষিক গুরুত্ব মাপতে হবে।
৪. ডিসচার্জ অবস্থায় ব্যাটারি ফেলে রাখা যাবে না এবং কম চার্জে ব্যাটারি ব্যবহার করা যাবে না অর্থাৎ প্রতিটি সেলের ভোল্টেজ ১.৮ ভোল্টের নিচে হলে। এ অবস্থায় ব্যাটারি চার্জ করতে হবে।
৫. ব্যাটারি ব্যবহারকালে সঠিকভাবে টার্মিনালে সংযোগ দিতে হবে।
৬. ব্যাটারির সেলসমূহে এসিড লেভেল কমলে বিশুদ্ধ বা পাতিত (Distilled) পানি এমনভাবে দিতে হবে যেন প্লেটসমূহ ১৫ মি.মি. এসিডে ডুবে থাকে।
৭. ডিসচার্জ রেট বা লোড অ্যাম্পিয়ার বেশি হওয়া চলবে না।
৮. ব্যাটারি প্রতিনিয়ত ওভারচার্জ করা যাবে না। ৯. ব্যাটারি ডিসচার্জ হওয়ার আগেই সঠিকভাবে চার্জ করলে ব্যাটারির কর্মক্ষমতা বাড়ে।
১০. ব্যাটারির উপর কোন ধাতব পদার্থ পড়লে ব্যাটারি শর্ট হতে পারে। সেজন্য সাবধান থাকতে হবে।
১১. ব্যাটারি রোদে রাখা যাবে না।
ব্যাটারির রেটিং বলতে উহার ভোল্টেজ, অ্যাম্পিয়ার-আওয়ার ক্যাপাসিটি, ডিসচার্জ হার বা রেট ইত্যাদিকে বোঝায়। একটি ব্যাটারির রেটিং এ উহার ভোল্টেজ ক্যাপাসিটি, অ্যাম্পিয়ার আওয়ার ক্যাপাসিটি অর্থাৎ কত ঘণ্টায় কী পরিমাণ অ্যাম্পিয়ার সরবরাহ দিতে সক্ষম। একটি ব্যাটারির রেটিং ১২ ভোল্ট, ৮০ অ্যাম্পিয়ার আওয়ার বলতে বোঝায়, উহা ১২ ভোল্টের লোডে ৮ অ্যাম্পিয়ার হারে ১০ ঘণ্টা বা ১০ অ্যাম্পিয়ার হারে ৮ ঘণ্টা চলতে সক্ষম।
ব্যাটারির রেটিং দুই ভাবে প্রকাশ করা হয়। (ক) ভোল্টেজ রেটিং এবং (খ) কারেন্ট রেটিং
কারেন্ট রেটিংঃ কোন নির্দিষ্ট হারে ব্যবহৃত সময়ে কারেন্ট সরবরাহের ক্ষমতাকে ব্যাটারীর কারেন্ট রেটিং বলে। ইহা ব্যাটারির গঠন এর উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ সেলে ব্যবহৃত এ্যাকটিভ পদার্থের পরিমাণ ও গুণাগুণের উপর নির্ভর করে। ভোল্টেজ রেটিংঃ কোন নির্দিষ্ট হারে ব্যবহৃত সময়ের জন্য ভোল্টেজ সরবরাহের ক্ষমতাকে ব্যাটারির
ভোল্টেজ রেটিং বলে। ইহা ব্যাটারিতে ব্যবহৃত এ্যাকটিভ পদার্থের ধরণ ও গুণাগুণের উপর নির্ভর করে।
ব্যাটারির ক্যাপাসিটি বা ক্ষমতা অ্যাম্পিয়ার আওয়ারে প্রকাশ করা হয়। চার্জযুক্ত একটি ব্যাটারি যে পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি (অ্যাম্পিয়ার আওয়ার) সরবরাহ করতে সক্ষম তাকে ব্যাটারির ক্যাপাসিটি বলে। অর্থাৎ কোন ব্যাটারি প্রতি ঘণ্টায় যত অ্যাম্পিয়ার সরবরাহ করতে পারে সেটাই ঐ ব্যাটারির ক্ষমতা। ইহাকে AH দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ১০ ভোল্ট, ১২.০ অ্যাম্পিয়ার ক্যাপাসিটির একটি ব্যাটারি ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে সক্ষম হলে তার রেটিং হবে, ১০ ভোল্ট, ১২০ অ্যাম্পিয়ার আওয়ার ।
ব্যাটারির ক্যাপাসিটি যে বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে: ব্যাটারির ক্ষমতা নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে-
(ক) প্লেটের সাইজের উপর
(খ) প্রতি সেলে প্লেটের সংখ্যার উপর
(গ) এসিডের পরিমাণ ও ঘনত্বের উপর
(ঘ) তাপমাত্রার উপর
(ঙ) ডিসচার্জ হারের উপর।
প্রতিটি বৈদ্যুতিক সেলে উৎপাদিত ডিসি ভোল্টেজের পরিমাণ সীমিত। বেশি পরিমাণের প্রয়োজনীয় ডিসি ভোল্টেজ পেতে এবং কারেন্ট ক্যাপাসিটি বাড়াতে সেলের সংযোগ বা গ্রুপিং করা হয়। সেল গ্রুপিং এর প্রয়োজনীয়তা, প্রকার ভেদ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সেল সংযোগ : অনেক ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক সিস্টেমে ভোল্টেজ ও কারেন্ট এর পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য কতকগুলো বা প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেলকে নিয়ম অনুযায়ী একত্রে সংযোগ করার প্রয়োজন হয়। একে সেলের সংযোগ বলে। সেলের এরূপ সংযোগকে একত্রে ব্যাটারি বলা হয়। ভোল্টেজ বৃদ্ধি, কারেন্ট বৃদ্ধি বা ভোল্টেজ ও কারেন্ট উভয়ই বৃদ্ধির চাহিদার উপর নির্ভর করে সেলের সংযোগ করা হয় ।
৩.৩ সেল সংযোগের শ্রেণিবিভাগ - সেলকে তিনভাবে সংযোগ বা গ্রুপিং করা যায়-
ক) সিরিজ সংযোগ, থ) প্যারালাল সংযোগ এবং গ) সিরিজ- প্যারালাল বা মিশ্র সংযোগ।
৩.৩.১ সেল সংযোগের প্রয়োজনীয়তা: সেলের সিরিজ সংযোগে ভোল্টেজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, আর প্যারালাল সংযোগে কারেন্ট এবং মিশ্র সংযোগে ভোল্টেজ ও কারেন্ট উভয়ই বৃদ্ধি পায়। লোডের প্রয়োজন অনুযায়ী বা ব্যবহারিক ক্ষেত্র অনুসারে সেলের প্রয়োজনীয় সংযোগ করে ব্যাটারি তৈরি করা হয়। প্রতিটি ড্রাই সেলের ইএমএফ ১.৫ ভোল্ট, নিকেল ক্যাডমিয়াম সেলের ইএমএফ ১.৪ ভোল্ট এবং লিড এসিড সেলের ইএমএফ ২.০ ভোল্ট হয়। আর অ্যাম্পিয়ার ক্যাপাসিটি সীমিত। ব্যবহারিক ক্ষেত্রের প্রয়োজন অনুসারে কতকগুলো সেলকে নিয়ম অনুযায়ী (সিরিজ বা প্যারালাল বা মিশ্র) সংযোগ করে ভোল্টেজ ও অ্যাম্পিয়ার ক্যাপাসিটি বাড়াতে সেলের সংযোগ করা হয়। কারেন্ট বৃদ্ধিতে সেলের প্যারালাল সংযোগ আর ভোল্টেজ বৃদ্ধিতে সিরিজ সংযোগ করা হয়। ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সেলের সংযোগ বা গ্রুপিং খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৩.৩.২ সেলের সিরিজ সংযোগ (Series Grouping of Cell): যখন সেলগুলোর মধ্যে ১ম টির ঋণাত্মক
প্রাপ্ত ২য় টির ধণাত্মক প্রান্তের সাথে আবার ২য় টির ঋণাত্মক প্রান্ত ৩য় টির ধণাত্মক প্রান্তের সাথে এভাবে পর পর সংযোগ করা হয়, তখন সেলগুলোর এরূপ সংযোগকে সিরিজ সংযোগ বলে। ৩.২০ নং চিত্রে সেলের সিরিজ সংযোগ দেখানো হয়েছে।
৩.৩.৩ সেলের সিরিজ সংযোগের গুরুত্ত্ব : প্রায় সকল ইলেকট্রনিক সরঞ্জামাদি / যন্ত্রপাতির ডোস্টেজ রেটিং বেশি থাকে। বাজারে প্রাপ্ত সেলের ভোল্টেজ ১.৫ ভোল্ট। বেশি ভোল্টেজ রেটিং এর যন্ত্রপাতি চালাতে বেশি ডোস্টেজের ব্যাটারি প্রয়োজন হয়। সেলের সিরিজ সংযোগে ব্যাটারির ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায়। লোডের প্রয়োজন অনুযায়ী ভোল্টেজ বাড়াতে সেলের সিরিজ সংযোগ করা হয়। এ সংযোগে কারেন্ট ক্যাপাসিটি একই থাকে অর্থাৎ সার্কিটে প্রবাহিত কারেন্ট প্রতিটি সেলের সমান হয়। লোডের ভোল্টেজ বেশি প্রয়োজন হলে সেলের সিরিজ সংযোগে ব্যাটারি তৈরি করা হয় ৩.২০ নং চিত্র অনুযায়ী প্রতিটি ১.৫ ভোল্ট এর সেল সিরিজে সংযুক্ত করায় আউটপুটে ৬.০ ভোল্ট পাওয়া যায়। নিচের চিত্র ৩.২১ তে লোডসহ n সংখ্যক সেলের সিরিজ গ্রুপিং দেখানো হলো।
ধরি, সিরিজে সংযুক্ত প্রতিটি সেলের
ইএমএফ =B
প্রতিটি সেলের অভ্যন্তরীণ রোধ =r
সংযুক্ত লোডের রোধ = R
তড়িৎ প্রবাহ = I
এবং সংযুক্ত সেল সংখ্যা = n
তাহলে সিরিজে সংযুক্ত সেলের ই এম এফ = nE
বর্তনীর অভ্যন্তরীণ রোধ = nr
বর্তনীর মোট রোধ = R + nr
বর্তনীতে প্রবাহিত কারেন্ট,
সবই প্রচলিত অর্থ বহন করে এবং সাধারণ এককে প্রকাশিত। সেলের অভ্যন্তরীণ রোধ কম হলে সেলের সিরিজ সংযোগ বেশি কার্যকরী হয়।
যখন কতকগুলো সেলের পজেটিভ বা ধণাত্মক প্রান্তকে এক বিন্দুতে এবং নেগেটিভ বা ঋণাত্মক প্রান্তগুলো অন্য আর এক বিন্দুতে সংযোগ করা হয়, তখন তাকে সেলের প্যারালাল সংযোগ বলে। প্যারালালে সংযুক্ত সেনসমূহের ইএমএফ একই হওয়া আবশ্যক। তা না হলে লোডে সংযুক্ত না করলেও ব্যাটারির ক্ষমতা কমে যাবে। চিত্র- ৩.২২ এ সেলের প্যারালাল সংযোগ দেখানো হয়েছে।
আমরা যে সমস্ত ইলেকট্রনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করি সেগুলোর ভোল্টেজ রেটিং ও কারেন্ট রেটিং একই হয় না। লোডের প্রয়োজন অনুযায়ী কারেন্ট প্রবাহ বাড়াতে সেলের প্যারালাল সংযোগ করা হয়। অর্থাৎ যে সমস্ত যন্ত্রপাতির জন্য বেশি কারেন্ট প্রয়োজন হয় সে সমস্ত যন্ত্রপাতি পরিচালনায় সেলের প্যারালাল সংযোগ একান্ত প্রয়োজন। সেলের প্যারালাল সংযোগে ব্যাটারির ভোল্টেজ একই থাকে এবং কারেন্ট প্রবাহ বৃদ্ধি পায়; অর্থাৎ সার্কিটের ভোল্টেজ প্রতিটি সেলের সমান হয়। লোডের ক্ষমতা অনুযায়ী কারেন্ট প্রবাহ বাড়াতে সেলের প্যারালাল সংযোগ করা হয়। সেলের প্যারালাল সংযোগে প্রতিটির ইএমএফ বা বিভব পার্থক্য একই হওয়া প্রয়োজন। এ সংযোগে প্রবাহিত মোট কারেন্ট সবগুলো সেনের কারেন্টের যোগফলের সমান। অর্থাৎ ব্যাটারির কারেন্ট ক্যাপাসিটি বাড়ে। দীর্ঘ সময় চালানোর জন্য সেলের প্যারালাল সংযোগ করা হয়। লোডের কারেন্ট বেশি প্রয়োজন হলে প্যারালাল সংযোগে ব্যাটারি তৈরি করা হয়।
নিচে চিত্র নং ৩.২৩-তে সেলের প্যারালাল সংযোগ দেখানো হয়েছে।
ধরি, প্যারালাল সংযুক্ত প্রতিটি সেলের ই এম এফ = E
প্রতিটি সেলের অভ্যন্তরীণ রোধ = r
সংযুক্ত লোডের রোধ = R,
তড়িৎ প্রবাহ = I এবং
সংযুক্ত সেল সংখ্যা = n
তাহলে, সেলগুলোর সংযোগে ব্যাটারির ইএমএফ =E (যেহেতু সেলগুলো প্যারালালে সংযুক্ত)
বর্তনীর অভ্যন্তরীণ রোধ
৩.৩.৬ সেলের সিরিজ-প্যারালাল বা মিশ্র সংযোগ :
Read more